Skip to content Skip to footer

ক্রস কান্ট্রি বাংলাদেশ: সাইকেলে দুই প্রান্তের দেশযাত্রা

চাকার ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে

সাইকেল চালিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ঘোরার অভ্যাস বহুদিনের। গ্রামীণ রাস্তা, সীমান্তঘেঁষা পল্লি, নদী-খাল-পাহাড়—সব কাছ থেকে দেখার জন্য এর চেয়ে ভালো বাহন আর নেই। “ভিজিট বাংলাদেশ ২০১৬” ঘোষণার পর মনে হলো, এই সুযোগেই সবার মাঝে সাইকেল ভ্রমণের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তাই বিজয়ের মাসে ১১ দিনের জন্য পথে নামলাম—ঢাকাকে কেন্দ্র করে একবার উত্তর থেকে দক্ষিণ, আরেকবার পূর্ব থেকে পশ্চিম—মোট প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার পথ, ১৭টি জেলা, ৩টি সীমান্ত, এবং সমুদ্রতট ছুঁয়ে শেষ।

উত্তর থেকে দক্ষিণের পথে

হালুয়াঘাট সীমান্ত থেকে শুরু
ডিসেম্বরের শীতল ভোরে আমি আর সঙ্গী হাসিব ভাই বাসে চেপে পৌঁছে গেলাম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায়। সীমান্তের ওপারে মেঘালয় রাজ্য, জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তোলা কিছু ছবিই আমাদের অভিযাত্রার সূচনা।

ব্রহ্মপুত্র পেরিয়ে রাজধানীর পথে
হালুয়াঘাট থেকে গ্রামীণ রাস্তা ধরে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ, শম্ভুগঞ্জ সেতু পেরিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে মোড়া ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার পথে নামা। রাত কাটল ত্রিশাল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের বাসায়।

ঢাকা–ময়মনসিংহ হাইওয়ে: সাইক্লিস্টদের স্বপ্নপথ
চকচকে চার লেনের রাস্তায় গতি বেড়ে গেলো দ্বিগুণ। গাজীপুরের মাওনায় পাভেল ভাইয়ের বাসায় এলাহি আপ্যায়নের পর সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরা।

পদ্মা পেরিয়ে দক্ষিণের ডাক
পরদিন মাওয়া ফেরি ঘাট পেরিয়ে শিবচরে রাতযাপন। সেখান থেকে শরীয়তপুর হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদী নৌকায় পার হয়ে বরিশালে প্রবেশ। সন্ধ্যায় বরিশাল শহরে হাসিব ভাইয়ের চাচার বাড়িতে থাকা।

শেষ গন্তব্য: মৌডুবির সমুদ্রতট
বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সড়ক, তারপর গলাচিপা হয়ে রাঙ্গাবালি উপজেলার মৌডুবি দ্বীপ। বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছানো দক্ষিণের শেষ প্রান্ত ‘জাহাজমারা’ সমুদ্রতটে। সেখানেই প্রথম ভাগের সমাপ্তি।

পূর্ব থেকে পশ্চিমের পথে

আখাউড়া সীমান্ত থেকে শুরু
কুমিল্লা হয়ে ধুলোমাখা রাস্তায় আখাউড়ার কল্লা পীরের মাজারে পৌঁছে নতুন সঙ্গী অনিক ও শাহাদাত ভাই যুক্ত হলেন। ত্রিপুরা সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হলো পশ্চিমমুখী যাত্রা।

মেঘনা পেরিয়ে ব্যস্ত রাজধানী
নবীনগর–বাঞ্ছারামপুর–আড়াইহাজার হয়ে মেঘনা নদী ফেরি পার। তাঁতের গ্রাম, শীতলক্ষ্যা পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ।

মানিকগঞ্জ থেকে রাজবাড়ি
গাবতলী থেকে সিংগাইর–মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাট, ফেরি পেরিয়ে রাজবাড়ি।

শেষ গন্তব্য: মুজিবনগরের আম্রকানন
রাজবাড়ি–কুষ্টিয়া–মেহেরপুর হয়ে মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আম্রকাননে পৌঁছে শেষ হলো পূর্ব–পশ্চিম যাত্রা। এখানে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের স্মৃতি আর সীমানা গেট ছুঁয়ে ইতিহাস ও ভ্রমণ মিলেমিশে গেল।

যাত্রার চ্যালেঞ্জ ও স্মৃতি

ধুলো-বালিমাখা ভাঙা রাস্তা

ঠান্ডা কুয়াশার সকাল

সীমান্তের নিরিবিলি নীরবতা

পথে পথে মানুষের কৌতূহল ও অতিথিপরায়ণতা

১১ দিনের এই ক্রস কান্ট্রি যাত্রা শুধু কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার গল্প নয়—এ ছিল মানুষের হাসি, চায়ের দোকানের গল্প, অচেনা পথের আতিথ্য, আর নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সাহসের গল্প। বাংলাদেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তে সাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে আমি আরও নিশ্চিত হলাম—এ দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশগুলোর একটি, যদি তা দেখার চোখ থাকে।