লেখক: গোলাম কিবরিয়া
‘একটুখানি সবুজ খুঁজি, কই সে সবুজ বন…’—সঞ্জীব দার গানের সেই অনুভূতি নিয়েই ১২ জনের আমাদের দল “আমার বাংলাদেশ” যাত্রা শুরু করল সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে। একদিনেই পাহাড়, ঝরনা আর সমুদ্র দেখার লোভ সামলানো কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি। রাত ১২টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আমরা পৌঁছালাম ভোর ৬টার দিকে সীতাকুণ্ড বাজারে।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পথে
অটোতে চড়ে দু’দল হয়ে ছুটতে লাগলাম সবুজের খোঁজে। গন্তব্যে পৌঁছে বাঁশ ভাড়া নিয়ে ও হালকা নাশতা সেরে শুরু হল চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ট্রেকিং। চন্দ্রনাথ শুধু পাহাড় নয়—এটি একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থান। হিমালয়ের বিচ্ছিন্ন দক্ষিণ-পূর্ব শাখার অংশ এই পাহাড়, যার পাদদেশে সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম তীর্থস্থান।
ট্রেকিং শুরুর কিছুক্ষণ পরেই শোনা গেল উদ্বেগজনক খবর—ভোরে ট্রেকিং শুরু করা একদল পর্যটক ডাকাতের কবলে পড়েছে। তবে আমরা একত্রে প্রায় ৩০ জন হওয়ায় সাহস নিয়ে এগিয়ে চললাম। বাঁশ হাতে উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে, মাঝে মাঝে থেমে পানি ও খেজুর খেয়ে অবশেষে প্রায় দেড় ঘণ্টায় পৌঁছালাম চূড়ায়।
চূড়া থেকে চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ, দূরে পাহাড়ের কোলে মেঘের খেলা। মুহূর্তেই শরীরের সমস্ত ক্লান্তি মিলিয়ে গেল। সবাই মিলে ছবি তুললাম, পাহাড়ি কলা, ডাব আর পানি খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।
সুপ্তধারা ঝরনার রূপ
চূড়া থেকে নেমে এবার গন্তব্য সুপ্তধারা ঝরনা। ইকো পার্কের টিকিট কেটে খাড়া পথ বেয়ে উপরে উঠে আবার ২,২৯৬ ফুট নেমে এলাম ঝরনার কাছে। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা সাদা জলের ধারা যেন প্রকৃতির অলঙ্কার। আমরা কেউ দেরি না করে ঝরনার নিচে নেমে পড়লাম—প্রকৃতির সেই স্নিগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের বিস্ময়
দুপুরের খাবার শেষে রওনা দিলাম গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের পথে—সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রসৈকতটি একেবারেই ভিন্ন রূপের—একদিকে নীল জলরাশি, অন্যদিকে কেওড়া বন, মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা খাল। সৈকতের জুড়ে বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচা, জোয়ারে নালা ভরে ওঠে পানিতে। পাখি, ঢেউ আর বাতাস মিলেমিশে তৈরি করে এক অনন্য পরিবেশ।
ফেরার পথে স্মৃতি
পাহাড়, ঝরনা আর সমুদ্র—একদিনেই এত বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় না। সেদিনের সীতাকুণ্ড সফর শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, দলবদ্ধ সাহস, বন্ধুত্ব আর ভ্রমণপ্রীতিরও এক অপূর্ব স্মৃতি হয়ে রইল।