চীন বিশ্বের অন্যতম বিশাল দেশ। মহাপ্রাচীরের জন্য বিখ্যাত হলেও চীনের অন্যান্য নানান স্থানও দর্শনীয়। তিয়ানশান পর্বতমালা, তাকলামাকান মরু, গোবি মরু, উত্তরের তুষারভাস্কর্য, মধ্য এশিয়ার কাশগড়, সাংহাই, শিয়ান—সবই নয়নাভিরাম। আমি বর্তমানে কুনমিং শহরে থাকি। আগে বেইজিং ছিল আমার প্রিয়। তাই এই দুই শহর আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
কুনমিংকে বলা হয় বসন্তের শহর বা ফুলের শহর। ইউননান প্রদেশের প্রধান শহর এটি। এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য অসাধারণ।
আমি চীনে প্রথম আসি ২০১১ সালে, সি আর আই (চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল) চাকরির জন্য। বেইজিং প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ করে। শিজিংশান এলাকায় আমার বাসস্থান ছিল, যা পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত মনোরম। এক বছরে ছুটির দিনে প্রায় ঘরে থাকিনি। ফরবিডেন সিটি, সামার প্যালেস, মিং টম্ব, লামা টেম্পল, থিয়েন আনমেন স্কোয়ার, ইউ ইউয়ান পার্ক, পাতাছু টেম্পল, ফ্র্যাগরান্স হিল—প্রায় সব দর্শনীয় স্থানে গিয়েছি।
চীনের কারুশিল্প আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। মন্দির, প্রাসাদ, স্থাপনা—সবই অপূর্ব কারুকার্যে ভরা। ছোট জিনিসও শিল্পীর হাত দিয়ে অসাধারণ হয়ে ওঠে। বেইজিংয়ে পার্কও প্রচুর। অফিস ছুটির পর বিকেলেই যেতাম পার্কে। প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রাণ ভরে তোলে। ঘরের জানালা দিয়ে লাওশান ও বাবাওশান পাহাড় চোখে পড়ে। শিজিংশান থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়ের গ্রামেও যেতাম ছুটির দিনে। শরতে পাহাড় রঙিন হয়ে ওঠে, বিকেলে বিভিন্ন কমিউনিটিতে নাচের আসর বসে।
সিচাহাই লেক অঞ্চলে সূর্যের আলো ও জলের খেলা দেখতাম। সন্ধ্যা হলে ওয়াং ফু চিং, শিয়ামেন ওয়াকিং স্ট্রিট বা হুথোংয়ে ঘুরতাম। এসব জায়গায় শপিংমল ও স্ট্রিট ফুডের আনন্দ মিলত। পার্কে ঘুড়ি উড়ানো, শীতে বরফের উপর স্কি, কুকুরটানা স্লেজ, বসন্তে চেরি ফুল—সবই বেইজিংয়ের সৌন্দর্য। স্কাল্পচার পার্কে বসে ভাস্কর্য আর জলের ছায়া দেখতে খুব ভালো লাগত।
চীনা সংগীত ও নৃত্যও মুগ্ধ করেছে। থিয়েন আনমেন স্কোয়ারে বিশাল পর্দায় অনুষ্ঠান দেখতাম। এই স্কোয়ারের চারপাশে ফরবিডেন সিটি, গ্রেট হল অফ চায়না ও বিশ্বের বৃহত্তম মিউজিয়াম।
কুনমিংয়ে ইউননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি আরও ঘনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি। মিয়াও, তাই, বাই, হুই, ইয়ি জাতির লোককাহিনী ও পোশাক অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ফুচাহেই-এর পদ্মফুল জলাশয়, তিয়ানশি লেকের শীতের পাখি—সবই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
চীনের গ্রেট ওয়াল দেখাও বিশেষ অভিজ্ঞতা। সেখানে হেঁটে উঠতে হয় হাজার হাজার ধাপ। মাও সেতুং বলেছিলেন, গ্রেট ওয়াল না চড়লে জীবনের অর্ধেক দেখেনি মানুষ।
ছাংশায় মহান নেতার জন্মস্থান ও থিয়েন আনমেন স্কোয়ারে সমাধি দেখার অভিজ্ঞতাও স্মরণীয়। এছাড়া কোয়াংচো, ওয়েইফাং, থিয়ানচিন, ছিংতাও, উরুমছিসহ বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করেছি। প্রতিটি শহরের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য।
কুনমিং বাংলাদেশ থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার বিমানের পথ। তাই বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য এটি খুব সুবিধাজনক। স্টোন ফরেস্ট, ওয়েস্টার্ন হিলস বা শিশান, ড্রাগন গেট—সবই অবশ্যই দেখার মতো।
কুনমিংয়ের খাবার সুস্বাদু। হালাল খাবারেরও ব্যবস্থা আছে। নারীর জন্য চীন নিরাপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাস—উভয়েই দেশটি পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
শান্তা মারিয়া