বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত ১৩টি ভিউ কার্ড যেন শুধুই ছবি নয়, এক একটি নীরব কবিতা। আলোকচিত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গি আর সৌন্দর্যবোধের মেলবন্ধনে ধরা পড়েছে দেশের প্রকৃতি, মানুষ ও ইতিহাসের অনুপম প্রকাশ। প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি রূপক, প্রতীক আর নান্দনিক বার্তা — শিল্প, প্রকৃতি ও মানবতার সম্মিলিত উচ্চারণ।
১. জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সাভার — আলোকচিত্রী: Muhammad Mostafigur Rahman
এই আলোকচিত্রে স্মৃতিসৌধের জ্যামিতিক কাঠামো যেন ধরা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আবেগময় আন্দোলন ও বিজয়ের অনুপম প্রতীক হিসেবে। ইট, কংক্রিট আর ঘাস একত্রে মিলিয়ে তৈরি করেছে এমন এক চিত্র, যেখানে নিঃশব্দেই উচ্চারিত হয় ইতিহাসের গৌরব।
২. রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বাংলাদেশ — আলোকচিত্রী: Dr. Niaz Abdur Rahman
আলোকছায়ার অনন্য ব্যবহারে বাঘের ডোরাকাটা শরীর বনজ রহস্যের সঙ্গে যেন এক হয়ে গেছে। এই চিত্র বলছে, প্রকৃতির রাজ্য ও তার শাসক অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত — সীমাহীন, অথচ সংগঠিত।
৩. সাদা শাপলা, বাংলাদেশ — আলোকচিত্রী: Noor Ahmed Gelal
পানির উপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা শাপলা যেন জলের বুকে নিভৃতে প্রজ্বলিত এক বাতি। ওপর থেকে আসা আলোর ছটা ফুলটিকে দিয়েছে স্বর্গীয় ঔজ্জ্বল্য, যা দর্শকের মনে জাগায় আশার আলো।
৪. কান্তজীউ মন্দির, দিনাজপুর — আলোকচিত্রী: Rajib Rana Das
ইটের দেয়ালে সূর্যকিরণের খেলা টেরাকোটার রঙের সঙ্গে এমনভাবে মিশেছে যে, মনে হয় প্রার্থনার ভাষা ছড়িয়ে পড়েছে আকাশের দিকে। এখানে বিশ্বাসের নিঃশব্দ ভাষা যেন প্রতিফলিত হচ্ছে প্রতিটি খোদাইয়ে।
৫. মণিপুরী নৃত্য, শিলপকলা একাডেমি, ঢাকা — আলোকচিত্রী: Muhammad Mostafigur Rahman
রঙিন পোশাক, মুখভঙ্গি ও দেহভঙ্গিমা মিলে এই ছবিটি যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। নৃত্যের প্রত্যেক মুহূর্তে স্পন্দিত হয়েছে সংস্কৃতির প্রাণ, যা দেখে মনে হয় ছন্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে চিরন্তন সুর।
৬. নৌকা বাইচ, বাংলাদেশ — আলোকচিত্রী: Asker Ibne Firoz
নদী ও মানুষের একত্র ছন্দে তৈরি হয়েছে গতি ও স্থিরতার অপূর্ব সংযোগ। বৈঠার ছন্দে নদীও যেন সাড়া দিচ্ছে — এই দৃশ্য প্রকৃতি ও মানুষের গভীর বন্ধনকে তুলে ধরে।
৭. শিমুল বিছানো পথ, নরসিংদী — আলোকচিত্রী: Muhammad Mostafigur Rahman
দুই পাশে শিমুল ফুলে রাঙানো রাস্তা যেন প্রকৃতির এক প্রেমপূর্ণ আহ্বান। ঝরেপড়া পাতার মাঝেও ফুটে থাকা লাল ফুল ভবিষ্যতের প্রতীক — এই দৃশ্য প্রকৃতির প্রজন্মপ্রেমকে মনে করিয়ে দেয়।
৮. সেন্ট মার্টিন সমুদ্রতীর — আলোকচিত্রী: Muhammad Mostafigur Rahman
উপরে থেকে দেখা ঢেউ ও বালির রেখার ছন্দে ফুটে উঠেছে এক রহস্যময় সমুদ্রপ্রান্তর। মনে হয়, এখানে দাঁড়িয়ে কল্পনার নৌকা চড়ে যাওয়া যায় অনন্তের দিকে।
১০. বুদ্ধ ধাতু জাদি, বান্দরবান — আলোকচিত্রী: Masum Ameer
সবুজ পাহাড়ের কোলে সোনালি মন্দির যেন এক আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল। ওপর থেকে দেখা এই দৃশ্যটি যেন নিঃশব্দে বলে, মানবপ্রেম ও প্রার্থনার আলো এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও ছড়িয়ে পড়ুক।
১১/১২. সুন্দরবন ও সাতছড়ি — আলোকচিত্রী: Muhammad Mostafigur Rahman ও Asker Ibne Firoz
হরিণ আর ল্যাঙ্গুরের পারিবারিক মুহূর্তের এই দুটি চিত্র যেন প্রকৃতির মুখে উচ্চারিত একটি আবেদন — ‘‘এই বন আমাদেরও, আমাদের ঠিকানাকে রক্ষা করুন।’’
এই ১৩টি ছবি কেবল শৈল্পিক সৌন্দর্যের উদাহরণ নয়, বরং প্রতিটি চিত্রই বয়ে এনেছে এক গভীর বার্তা। কোথাও আলোর সঙ্গে ছায়ার আলাপ, কোথাও ইতিহাস আর সংস্কৃতির হাত ধরাধরি করে প্রকৃতির সঙ্গে চলা। এই চিত্রগুলো দেখে মনে হয়, বাংলাদেশ নিজেই নিজের পরিচয় দিয়ে বলছে:
‘‘এই আমি — আমাকে জানো, ভালোবাসো, আগলে রাখো।’’
✦ বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন–এর প্রকাশিত ভিউ কার্ড থেকে সংগৃহীত