লিখেছেনঃ ফয়সাল আহমেদ
মনিপুরীদের (মেইতেই জাতিসত্ত্বা) সবচাইতে বড়ো ও জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান রাস উৎসব বা রাসলীলা। প্রতি বছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মৌলভী বাজার জেলার কমলগঞ্জে মনিপুরী অধ্যুষিত আদমপুর ও মাধবপুরে বড় আয়োজনে রাস উৎসব হয়। এছাড়া সুন্দরবনের দুবলার চর, কুয়াকাটা ও কান্তজির মন্দিরের রাস উৎসবের কথা আমরা জানি। এবার আমার ‘ভ্রমণযোগ’ ছিল মনিপুরীদের রাস উৎসবে যোগ দেয়ার। কবি বন্ধু নুরুল হালিমকে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে পেয়ে যাই। ৫ নভেম্বর, ২০০৬- এ আমরা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
মাত্র চার ঘন্টার রেলভ্রমণ। ঢাকা থেকে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। ভাল বাস সার্ভিস রয়েছে। বাসে ঢাকা থেকে সিলেটে এখন ৫-৬ ঘন্টায় পৌঁছা যায়। এক সময়কার তুমুল ব্যস্ত বাহন রেল এখন সরাসরি সিলেটের যাত্রীদের কাছে খুব একটা আকর্ষণীয় নয়। রেল এর আধুকায়ণ বা দ্রুত গতির ট্রেন না থাকা এর অন্যতম কারণ। তারপরও ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলার নোয়াপাড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, শমসেরনগর, কুলাউড়ার যাত্রীরা এখনো রেল ব্যবহার করেন। রেলে অবশ্য আখাউড়া বাইপাস করায় প্রায় ঘন্টাখানেক সময় কম লাগছে। যাত্রীসেবার মান উন্নত করলে রেলভ্রমণ যে জনপ্রিয় হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
আমাদের ট্রেন ইতোমধ্যে টঙ্গী ব্রীজ ছেড়ে পূবাইল অতিক্রম করছে। সামনে ঘোড়শাল। মনে পড়ছে ট্রেন যাত্রার কতো আনন্দদায়ক বা কখনো কখনো অনাকাঙ্খিত অভিজ্ঞতা। পূর্বের লোকাল ট্রেনগুলোতে আগে থেকে কেউ গিয়ে সিট দখল করে রাখতে হতো অথবা দালালদের কাছ থেকে দখলকৃত সিট কিনে নিতে হত। মা-বাবা, ভাই- বোনেরা মিলে আমরা গ্রামের বাড়ি সিলেট যেতাম। দীর্ঘ তেরো থেকে চৌদ্দ ঘন্টার রেলযাত্রা। পা ফুলে কলাগাছ হয়ে যেত। শরীর ব্যথায় টনটন করত। কিন্তু আমাদের আনন্দের এতটুকু ঘাটতি হত না। আমরা রেলযাত্রার প্রতিটি মুহুর্ত উপভোগ করতে চাইতাম। কোনো কিছু থেকে যেনো বঞ্চিত হতে না হয়। বিভিন্ন রেল স্টেশন, জেলা শহর, থানা শহর, নদী, সাঁকো, বিল, হাওড়, জঙ্গল, ধানক্ষেত, সরিষা ক্ষেত, কাক তাড়ুয়া, মেঠো পথ, পাহাড় টীলা, চা-বাগান, খাসিয়াপুঞ্জী আরো কত কী দেখে দেখে স্মৃতির ভান্ডার সমৃদ্ধ করতাম! ছেটোবেলাতেই আমাদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল কমলাপুর থেকে পরের স্টেশনগুলোর নাম টঙ্গী, পূবাইল, আড়িখোলা, মেথিকান্দা, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, নোয়াপাড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ, শমশেরনগর, লংলা, কুলাউড়া, বরমচাল, মাইজগাঁও, ফেঞ্চুগঞ্জ সহ আরো কত কত স্টেশনের নাম। সাধারণ রেল স্টেশন ও জংশনের পার্থক্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক হতো ভাই-বোনদের মধ্যে। শৈশবে ধারণা ছিলো বড়ো স্টেশন মানেই জংশন। একদিন বাবা অথবা বড়ো ভাই কেউ একজন বুঝিয়ে দিলেন, যে স্টেশন ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যের সাথে সংযোগকারী সেটিই জংশন। স্টেশন ছোটো বা বড়ো হলেই জংশন হয় না। অবশ্য অনেকগুলো গন্তব্যের ট্রেন ও যাত্রীদের কোলাহলে জংশনগুলো কিছুটা বড়ই হয় ও ব্যস্ত থাকে। এরপর সিলেট যাত্রাপথে জংশন আসলেই আমাদের ঔৎসুক্য বেড়ে যেত। আরো গন্তব্য, আরো রেল, আরো বিচিত্র মানুষের ভীড় দেখতে পাবো বলে।
আখাউড়া বড় একটি জংশন। এই জংশনে চট্টগ্রামগামী ট্রেন সরাসরি চলে যেত। বাইপাস লাইন না থাকায় সিলেটগামী ট্রেন ইঞ্জিন বদল করত। ফলে এখানে বেশ খানিকটা সময় লাগতো। বর্তমানে বাইপাস লাইন করায় আর ইঞ্জিন বদল করতে হয় না। এই ইঞ্জিন বদল নিয়ে মজার গল্প আছে। ট্রেন ইঞ্জিন বদলিয়ে আবার যখন খানিকটা ঢাকা অভিমুখে চলে বাঁক নিবে তখন ব্যাপার কী জানতে চাইলে, কেউ একজন আমাকে বলেছিলো আমরা ঢাকা চলে যাচ্ছি। ঝামেলার কারণে ট্রেন সিলেট যাবে না, তখন অনেকক্ষণ মন খারাপ থাকত। একটু পরে নিজেই ইঞ্জিন বদলের রহস্যটি বুঝতে পেরে লজ্জা পাই। আখাউড়ায় ইঞ্জিন বদল নিয়ে আরেকটি মজার গল্প বলি। ইঞ্জিন বদল করে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ট্রেন যখন আবার ঢাকার দিক ঘুরছিলো তখন ভুলক্রমে সিলেটের ট্রেনে উঠে পড়েন একজন ঢাকাগামী যাত্রী। তখন পাশে বসা সিলেটের যাত্রী তাকে জিজ্ঞেস করেন, ভাই আপনি কোথায় যাবেন? লোকটি উত্তর দেয় ঢাকা যাবে। তখন সিলেটের যাত্রী বলে উঠেন, ‘বাহ, বিজ্ঞান কী ডেবোলাফ! এখু ট্রেইনো চড়িয়া আমি যাইয়ার সিলেট, আর আফনে যাইরা ঢাকা!’
ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত লাইন ভালো। বেশ গতি নিয়ে চলছে ট্রেন। তবে লাইনে পাথর না দেওয়া, স্লি¬পার সংস্কার না করা ইত্যাদি কারণে শব্দ হয় খুব বেশী। আরেকটি কারণ বগিগুলো পরের প্রজন্মের কয়েল স্প্রিঙয়ের নয়। স্টিলের সেতু এলেতো কথাই নেই, যেনো হাওয়ার ওপর দিয়ে রেলগাড়ি চলে যাচ্ছে এমন শো শো শব্দ হয়। আমি হালিম ভাইয়ের দিকে তাকাই, দক্ষিণের মানুষ পূর্বের রেলযাত্রা বেশ উপভোগ করছেন।
যেতে যেতে আমি মনিপুরী জাতিসত্ত্বা (মেইতেই) সম্পর্কে মনিপুরীদের একজন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী এ.কে. শেরাম লিখিত বাংলা পিডিয়ার বিশেষ কিছু অংশ অধ্যয়ন করি। শেরাম লিখছেন“প্রাচীনকালের সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং এখনকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুর এদের আদি বাসস্থান। প্রাচীনকালে মনিপুরী সম্প্রদায় ক্যাংলেইপাক, ক্যাংলেইপাং, ক্যাংলেই, মেইত্রাবাক, মেখালি প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিলো। মনিপুরীদের মেইতেই নামেও অভিহিত করা হতো। মহারাজ গরীব নেওয়াজের (১৭০৯-১৭৪৮) শাসনামলে সিলেট থেকে আগত মিশণারিগণ এই স্থানকে মহাভারতে বর্ণিত একটি স্থান মনে করে এই ভূখন্ডের নাম দেন মনিপুর। এভাবেই এখানকার প্রধান অধিবাসী মেইতেইদের নাম হয়ে যায় মনিপুরী। পরবর্তীকালে অনুসন্ধান করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এখনকার মণিপুর এবং মহাভারত-এর মণিপুর একই স্থান নয়। মণিপুরীরা বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ, সংগ্রাম এবং অন্যান্য সামজিক, রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করে। এ ধরণের অভিবাসন প্রথম শুরু হয় (১৮১৯-১৮২৫) মণিপুর-বার্মা যুদ্ধের সময়। একটি অনুসন্ধানী গবেষণায় লক্ষ্য করা যায় যে, এই যুদ্ধের সঠিক কাল আরোও আগে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এবং রাজা ভাগ্যচন্দ্রের সময়ে (১৭৬৪-১৭৮৯) উক্ত অভিবাসন শুরু হয়।”
এই পর্যন্ত পড়ে থামি। ততক্ষণে ট্রেনখানি আজমপুর নামক স্টেশনে এসে থেমেছে। এটিই আখাউড়া বাইপাস রেল লাইনের সংযোগকারী স্টেশন। এখানে ট্রেন পাঁচ মিনিট থামবে। মনে পড়ে আখাউড়া স্টেশনের কতো স্মৃতি। নানারকম কলা, পেয়ারাসহ নানারকম ফল, বাদাম, চানাচুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্দেশ, শসা, পান-সিগারেট, পত্র-পত্রিকা, সস্তা উপন্যাস, হস্তশিল্প সহ নানা পণ্যের ফেরিওয়ালার হাঁকডাক। আরো ছিল ফেন্সিডিল ব্যবসায়ী, কালোবাজারী, প্রতিটি বগিতে হঠাৎ করে বিডিআর এর চেকিং, মানুষের ছোটাছুটি। একসাথে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও সিলেটের ট্রেনের আসা-যাওয়া সে এক দারুণ গতিশীল ও জমজমাট জংশন এই আখাউড়া। সিলেট থেকে অনেকগুলো ট্রেন আখাউড়া হয়ে যাওয়া আসা করে। আখাউড়ারয় আসা যাওয়া করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রেন। বাইপাস হয়ে যাওয়ায় এখন আখাউড়ার ব্যস্ততা আর আগের মত নেই। মনে আছে, আখাউড়া বাইপাস না হওয়ার জন্যও আখাউড়ার একদল স্থানীয় মানুষ আন্দোলন করেছিল। সত্যি, বিচিত্র এই দেশ!
ট্রেন আবার গতি পেয়েছে। আখাউড়া থেকে বেশীক্ষণ লাগবে না শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে। মাঝে নোয়াপাড়া ও শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন পরেই শ্রীমঙ্গল। আজমপুর থেকে দেড় ঘন্টার পথ। হালিম ভাইয়ের সাথে নানা বিষয়ে গল্প ও আড্ডার পর আবারো মেলে বসি মনিপুরীদের সম্পর্কে লেখা এ.কে. শেরামের প্রবন্ধে।
‘পড়তে পড়তে গন্তব্যে’একটি ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকার স্লোগান। আমিও পড়তে পড়তে শ্রীমঙ্গলে স্টেশনে আমাদের গন্তব্যে চলে এলাম। এখান থেকে জীপযোগে যেতে হবে মূল গন্তব্য্যস্থল কমলগঞ্জের আদমপুরে। শ্রীমঙ্গলের কেন্দ্রস্থল চৌমোহনীর একটি রেস্তোঁরায় আমরা সকালের নাস্তা সারি। এরপর হেঁটে হেঁটে চলে যাই শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কাছে। এখান থেকে কমলগঞ্জ বা ভানুগাছগামী জীপ যায়। আমরা বড়োসড়ো একটি জীপে চড়ে বসি। একজন দুইজন করে জীপ ভরে যায়। আমাদের সাথে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন মনিপুরী তরুণও একই জীপে আদমপুর যাচ্ছে। ওদের সাথে বেশ জমে যায় আমাদের। এদের মধ্যে সবচাইতে বেশি আড্ডাবাজ স্বপন। ওর সাথেই কথা হয় বেশি। স্বপন ও ওর কমিউনিটির আরো ছাত্ররা মিলে ঢাকার গ্রীনরোডে থাকে।
জীপ ইতোমধ্যে চলতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই ফিনলে চা বাগানের ভেতর চলে এলাম। চা বাগান অতিক্রম করে এখন আমরা লাউয়াছড়া বন অভিমুখে। যেতে যেতে স্বপন জানায়, তারা ভারতের মনিপুর রাজ্যে যেতে চায়। বাংলাদেশ থেকে অনুমতিও পেয়েছে কিন্তু ভারত সরকার ভিসা দিতে টালবাহানা করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মধ্যে মনিপুর অন্যতম। মনিপুরীদের মূল ভূমি হচ্চে মনিপুর রাজ্য। ভারতের মনিপুরীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের রাষ্ট্র কর্তৃক শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার। ওখানে মনিপুরীরা নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবীতে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে জানা যায়, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক মনিপুরীদের ওপর নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টারস’বলে পরিচিত রাজ্যগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতে জাতিগত অধিকার আদায়ের সংগ্রাম খুব জোরদারভাবে চলছে। মূল কথা হলো, যেকোন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার ওপর বৃহৎ জাতিসত্ত্বা কর্তৃক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য ও শোষণ অব্যাহত রাখলে অস্থিরতা বিরাজ করবেই। কখনো কখনো এই ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপলাভ করতে পারে। যেমনটি আমরা পাকিস্তান কাঠামোর ভেতর থেকে স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছিলাম, যা এক পর্যায়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপ লাভ করে। যতো বড়ো পরাশক্তিই হোকনা কেন, গায়ের জোরে কোনো কিছুই স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় না।
আমরা এখন লাউয়াছড়া জঙ্গল অতিক্রম করে যাচ্ছি। স্বপন ও তার বন্ধুরা তুমুল আড্ডায়, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে। আমি হালিম ভাইকে বলি, দেখুন, বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি বন। এখানে বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় তিন প্রজাতির উল্লুক রয়েছে। রয়েছে বানর, অল্প কিছু মায়াহরিণ, বিড়াল জাতীয় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, অজগর সাপ সহ আরো কিছু জীবজন্তু। এছাড়া লাউয়াছড়ায় বেশকিছু দূর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ ও অর্কিড রয়েছে।
দেখতে দেখতে চলে এল মাগুরছড়ার পরিত্যাক্ত গ্যাস কুপ। কমলগঞ্জ যেতে হাতের ডানদিকে ফেলে যেতে হয় এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্যাসক্ষেত্রটি। অক্সিডেন্টাল নামক একটি মার্কিনী কোম্পানীর খামখেয়ালীপণার শিকার হয়ে মাগুরছড়ায় আবিষ্কৃত এই মহামূল্যবান সম্পদটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গ্যাস, বনভূমি, পরিবেশ ও তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেব করে বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, মাগুরছড়ায় তখনকার হিসাবে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের গ্যাস ও পরিবেশের ক্ষতি করার পরও অক্সিডেন্টাল কোম্পানী আজ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি। উপরন্তু তারা তাদের শেয়ার আরেকটি বিতর্কিত মার্কিন কোম্পানী ইউনিকোলের কাছে বেঁচে দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। ইউনিকোলও এই গ্যাসক্ষেত্রের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এই বিদেশী কোম্পানীর সাথে এদেশের দালাল ও দোসর জড়িত থাকার কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপ নেই বললেই চলে। যা আছে তা’ লোক দেখানো কিছু আনুষ্ঠানিকতা। মাগুরছড়া পরিত্যাক্ত গ্যাসক্ষেত্র পাড়ি দিয়ে একটু সামনে গেলে বামদিকে পড়ে একটি খাসিয়াপুঞ্জী।
আমাদের জীপটি কমলগঞ্জে এসে কিছুক্ষণ থামে। কিছু যাত্রী নেমে যায়, আবার কিছু আদমপুরের যাত্রী উঠে বসে। আমরা আবার চলতে শুরু করি আদমপুরের উদ্দেশ্যে। কমলগঞ্জ থেকে আধা ঘন্টার মতো লাগে মূল গন্তব্যস্থল আদমপুর বাজারে পৌছাতে। স্বপন ও তার বন্ধুদের কাছ থেকে আপাতত বিদায় নিই। অনুষ্ঠানে আবার দেখা হবে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে বাজারের দিকে এগোই। আদমপুর একটি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। তাই বাজার এলাকাটা বেশ বড়ো। আমরা একটি চায়ের দোকান থেকে চা পান করে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে যাই। সম্ভবত অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ঢাক ও ঢোলের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমরা।
বেশ বড় একটি মাঠে বিশাল প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে। মঞ্চের সামনে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা। একটি বাড়িতে বড় আকৃতির একটি খোলা মন্দির। সাধারণত মনিপুরী মন্দির যেরকম হয়, মন্দির ঘিরে রয়েছেন পূজারী, নৃত্য পরিবেশকারী ও সাধারণ দর্শকগণ। আমরা গোলাকৃতি মন্দিরের সামনে গিয়ে বসি। উপস্থিত একজন মনিপুরী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করি, অনুষ্ঠানগুলোর পর্যায়ক্রমগুলো কি কি? তিনি জানান, একটু পরেই শুরু হবে রাখাল নৃত্য। এই নাচের বিভিন্ন উপস্থাপনা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শেষ হবে। এরপর পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিনজন বিশিষ্ট মনিপুরী ব্যক্তিত্বকে দেওয়া হবে সম্মাননা। রাত ১২টায় শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান রাসলীলা।
অনুষ্ঠানের একটা সূচী পাওয়া গেলো। হালিম ভাই বেশ আগ্রহভরে একেকজনকে নানা তথ্য জিজ্ঞেস করে নোট নিচ্ছেন। তবে যারা উত্তর দিচ্ছেন তারা কেউই রাখালনৃত্য, রাসলীলা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছিলেন না। সবারই দেখছি ধর্ম-কর্মে তেমন একটা মন নেই। রাস উৎসব সম্পর্কে জানাশুনা আরও কম। অবশ্য উৎসব পালন করতে এসে এত জ্ঞান দিয়েই বা কী হবে?
আমাদের সাথে নিজে থেকে এসে পরিচিত হয় সঞ্জীব নামক এক মনিপুরী তরুণ। তাকে বলি, উৎসব উপভোগ ছাড়াও আমাদের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি লেখা তৈরী করা। সঞ্জীব আমাদের বেশ সহযোগিতা করে। সঞ্জীব আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি চন্দ্রকীর্তি দা’র সাথে। তিনি বাংলাদেশ মনিপুরী সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি। কীর্তিদা আমাদের একেবারে মঞ্চের সামনে বসার ব্যবস্থা করেন। তিনি অনুষ্ঠান নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত। তারপরও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেন।
রাখালনৃত্য অনেকক্ষণ হয় শুরু হয়েছে। কৃষ্ণ ছিলেন রাখাল বালক। অবতার কৃষ্ণের সেই রাখাল বেশে কৃষ্ণ ও রাখাল সহচরদের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় কাহিনী তুলে ধরে নাচ পরিবেশন করা হচ্ছে বাদ্যের তালে তালে। নৃত্য দেখতে দেখতে, কখনো সঞ্জীব, কখনো কীর্তিদা, কখনো স্বপন সবার সাথে কথা বলতে বলতে দুপুর গড়িয়ে যায়। এখন পেটে কিছু না দিলেই নয়। আমরা আদমপুরের একটি রেস্তোঁরায় দুপুরের আহার গ্রহণ করি।
জমজমাট হয়ে উঠেছে আদমপুরের রাস উৎসবের কেন্দ্রীয় মন্দির। বিকেলে মনিপুরী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরদের ঢল নামে। স্থানীয় বাঙালীরাও যোগ দিয়েছেন উৎসবে। মাঠ সংলগ্ন একটি খোলা জায়গায় নানা ধরণের খাবার ও খেলনা নিয়ে মেলার পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানীরা। সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। ইতোমধ্যে রাখাল নৃত্য সমাপ্ত হয়ে গেছে। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক ও আলোচনা সভার আয়োজন চলছে।
সঞ্জীব আমাদের নিয়ে যায় বাংলাদেশ মনিপুরী সাহিত্য সংসদের স্টলে। এখানে পরিচয় হয় সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার সিংহের সাথে। এখানে বসেছিলেন মনিপুরী ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক মনিহার শোনি। মনিহারদা’র সাথে আমাদের বেশ আড্ডা জমে ওঠে। রাজকুমার জানালেন মনিহারদা’ সহ তিনজনকে এবার সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দুজন হচ্ছেন বর্তমানে সিলেটের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা ও লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতার প্রথম স্থান অধিকারী শানারৈ দেবী শানু।
গানের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। মনিপুরী এবং বাংলা ভাষায় আধুনিক, ব্যান্ড এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত চলতে থাকে বিভিন্ন মনিপুরী শিল্পীদের পরিবেশনায়। বেশ কয়েকটি গান পরিবেশনার পর শুরু হয় আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান পর্ব। আলোচনা সভা শুনতে শ্রোতারা এখন খুব বিরক্ত হন। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অনুষ্ঠানের ঘোষক বার বার ঘোষণা করছিলেন,‘আলোচনা ও সম্মাননা পর্ব শেষে আবারো শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।’এ যেন দুষ্টু শিশুকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখা আর বলা ‘এখন একটু কষ্ট করে ভাতগুলো খাও, পরে মিষ্টান্ন পাবে!’
আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান পর্ব শেষ হয়ে এখন আবারো শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লাঠি নৃত্য, মার্শাল আর্ট এর ভঙ্গিমায় নৃত্য, রাস নৃত্য দারুণ উপভোগ্য হয় উপস্থিত দর্শকদের কাছে। দারুণ উপভোগ করি ‘কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে, ফুলে বইলা ভ্রমরা, ময়ূর বেশেতে সাজন রাধিকা’গানটির সাথে নাচ। তবে গানটি ছিল মেইতেই ভাষায়। এরমধ্যে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা গেয়ে শোনালেন-
‘পুরণো সেই দিনের কথা ভুলবি কীরে হায়,/সে তো চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সেকি ভোলা যায়…
উপস্থাপকের অনুরোধে রানা কুমার সিনহা এই গানটির ইংরেজী ভার্সনেও গেয়ে শোনালেন। অসাধারণ দরদী কণ্ঠ এই শিল্পীর। রানা কুমার সিনহা শুদ্ধ রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চার জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন সঙ্গীতাঙ্গনে।
এরমধ্যে আমি ও নুরুল হালিম ভাই রাতের খাবার সেরে আসি রেস্টুরেন্ট থেকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। এখন শুরু হবে মূল আকর্ষণ রাসনৃত্য। মনিপুরী কুমারী মেয়েরা সারা রাতব্যাপী পরিবেশন করবে এই নৃত্য, যে নৃত্য নান্দনিকতার জন্য বিশ্বখ্যাত। আর বিশ্বে এই নৃত্যকে পরিচিত করাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মনিপুরীদের কাছে কবিগুরু বিশেষ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত।
শুরু হলো আমাদের বহু প্রতিক্ষিত ও রাস উৎসবের সবচাইতে আকর্ষণীয় পর্ব রাসনৃত্য বা রাসলীলা। । গোলাকৃতি মঞ্চের সামনের দিকে বসেছে গায়ক ও বাদ্যযন্ত্রীরা। মঞ্চের মূল প্রবেশমুখে বসেছে নৃত্যশিল্পীরা। ভেতরে রঙিন কারুকার্যময় পোষাকের সাথে বাইরে সাদা ফিনফিনে নেটের আবরণ দেওয়া চমৎকার সাজে সজ্জিত শিল্পীরা। চারিদিকে মঞ্চকে ঘিরে রয়েছে হাজারো ঔৎসুক দর্শক। কী কারণে যেনো বিলম্ব হচ্ছে। আমি ও হালিম ভাই সামনের দিকে চেয়ারে আরো অনেকের সাথে বসে অপেক্ষা করছি। এরমধ্যে ফুটফুটে ছোট্ট সুন্দর একটি শিশু মঞ্চে প্রবেশ করল লো। রাসনৃত্যে সেই রাঁধা। আরেকটি শিশু প্রবেশ করে মঞ্চে। সে হচ্ছে কৃষ্ণ। একে একে মঞ্চে প্রবেশ করতে থাকে নৃত্যশিল্পীরা। বাদ্যের তালে তালে তারা তুলে ধরে নানা ভঙ্গিমায় মনিপুরী দ্রুপদী নৃত্যের মুদ্রা।
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, মনিপুরী নৃত্যে শারীরিক অঙ্গ-প্রতঙ্গ চালনার মাধ্যমে নৃত্য শিল্পীরা বৃত্ত বা উপবৃত্ত সৃষ্টি করে। মনিপুরী নৃত্য লাস্য বা কোমল ধরণের নাচ হিসেবে পরিচিত। চমৎকার পোষাক, শারীরিক ভঙ্গিমা, সৌন্দর্য ও নিবেদনের আকুতি প্রকাশ পায় এই নৃত্যে। সারা রাত জেগে এই নৃত্য উপভোগ করি আমরা। এতোটুকু ক্লান্তি ভর করেনি আমাদের শরীরে। মাঝে মাঝে অবশ্য আমি ও হালিম ভাই চা ও হালকা খাবার খেয়ে আসি। এভাবেই চলে সারারাত।
ছোট্ট দুটো মেয়ে, কয়েকটি কিশোরী ও তরুণী নেচে গেলো রাস নৃত্য। এতোটুকু ক্লান্তি ভর করেনি ওদের মধ্যে। নৃত্য যতোটুকু বুঝতে পারি, তালের সাথে নাচ ও তার প্রকাশভঙ্গির এতোটুকু এদিক সেদিক হয়েছে বলে মনে হয়নি। মেইতেই-বাঙালী সকলে মিলে সারা রাত জেগে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এই রাস উৎসব চমৎকার এক রঙিন মিলনমেলায় পরিণত হয়। এমন চমৎকার একটি উৎসব বিদেশী পর্যটকদের কাছে প্রচার করা উচিত। পর্যটকদের যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা করলে দেশী-বিদেশী অনেকেই এই অনুষ্ঠান দারুণ উপভোগ করবেন।
রাত ভোর হয়ে এলো। এবার আমাদের ফিরতে হবে। রাত জাগার ক্লান্তি জুড়োতে একটু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। বিকেলে শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রেন ধরতে হবে। জীপ এখনো চলাচল শুরু করেনি। একটা মিশুক আসে, সেটাতে চড়ে বসি ভানুগাছ পর্যন্ত যাবে এটা। ভানুগাছ থেকে জীপ বা বাসে চড়ে শ্রীমঙ্গল। আমরা যখন ভানুগাছের দিকে রওনা হলাম, তখনো ঢাকের শব্দ আসছিলো অর্থাৎ রাসনৃত্য তখনো শেষ হয়নি। একটু পরেই শেষ ঢাকের বাড়ি পড়বে এবং সমাপ্ত হবে দ্রুপদী নৃত্যের এই রাস উৎসব। ভাঙ্গবে বহু মানুষের মিলনমেলা।
আমরা চমৎকার এক ভোরের সকালের যাত্রা উপভোগ করি আদমপুর থেকে কমলগঞ্জ পর্যন্ত। ভোরের অনুভূতি মানুষের পুরো দিনের সবচাইতে সেরা অনুভূতি। অবশ্য দিনের প্রতিটি পরিবর্তনকেই উপভোগ করা যায়। আমরা ভানুগাছ থেকে একটি বাস ধরে আবার সেই পূরনো পথ লাউয়াছড়া, ফিনলে চা বাগান হয়ে হয়ে শ্রীমঙ্গল চলে আসি। টি টাউন গেস্ট হাউজের একটি কক্ষ বিকেল পর্যন্ত ভাড়া করি খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার জন্য। আরো একদিন থাকলে অবশ্য মাধবপুর হ্রদ, বাইক্কার বিলে পাখি দেখা, লাউয়াছড়া বনের ভেতরে ট্রেইলসহ আরো স্থানে ঘুরে বেড়ান যেত। আমি এসব স্থানে বহুবার গিয়েছি, তারপরও প্রতিবারই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। মনে হয় যেন এইতো প্রথম এলাম।
হাতে কিছুটা সময় আছে। তাই একটু বিশ্রাম নিয়ে হালিম নিয়ে ভাইকে বেড়িয়ে পড়ি চা বাগান দেখতে। ফিনলে চা বাগান ঘুরে ফিরে দেখি। টিবোর্ডে কিছুক্ষণ কাটিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যাই নীলকণ্ঠ চা কেবিন- এ। এখানে সাত রঙের চা পাওয়া যায়। এই বিস্ময়কর চা এর উদ্ভাবক রমেশ রাম গৌড়। যার চা-এর খ্যাতি দেশে বিদেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বিকেল হলে বিশাল এলাকাজুড়ে বসে যায় চা-পায়ীদের মেলা। রমেসের হাতের কৌশলে তৈরী হচ্ছে এই চা। একদম নিচে ঘন দ্রবণ, তারপর একটু হালকা দ্রবণ এভাবে একদম ওপরে সবচেয়ে হালকা দ্রবণ এভাবে মিশ্রণ করা হয় চা-এর। গ্রীণ টি, লেবু চা, দুধ চা ইত্যাদি বিভন্ন দ্রবণের মিশ্রণ থেকে এক একটা রঙের চা তৈরী হয়। রমেস বাবুর দোকানে অবশ্য চায়ের দাম ৫ টাকা থেকে শুরু হলেও সাত রঙের এক গ্লাস চা পান করতে গুণতে হবে সত্তর টাকা।
বিকেল ৫ঃ১০ মিনিটে পারাবত সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছায়। পারাবত চলতে শুরু করে ঢাকার উদ্দেশ্যে। একই কামরায় পেয়ে যাই সঞ্জীবকে। সঞ্জীবের সাথে জমে উঠে আমাদের আড্ডা। সঞ্জীব জানায়, মনিপুরীরা রাস উৎসব ছাড়াও আরো বিভিন্ন উৎসব জাঁকজমকের সাথে পালন করে থাকে। এরমধ্যে জন্মাষ্টমী, দূর্গাপূজো, লক্ষ্মীপূজো, থাবাল চৌবা, পোলো উৎসব ইত্যাদি অন্যতম। এই উৎসবগুলো মেইতেই এবং বিষ্ণুপ্রিয়া উভয় মতাদর্শীরা পালন করে। অপরদিকে পানগন বা মনিপুরী মুসলমানগণ মুসলিম পালা-পার্বন ও উৎসব পালন করলেও তাদের নিজস্ব জাতিগত উৎসবেও অংশগ্রহণ করে থাকে।
পুরোটা পথ কখনো হালিম ভাইয়ের কবিতা গ্রন্থ থেকে পাঠ, কখনো সঞ্জীবের সাথে আড্ডা যার বিষয়বস্তু মূলত মনিপুরী সংস্কৃতি ও উৎসবকে ঘিরে, কখনো রাজনীতি বিষয়ক আলোচনা করতে করতে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঢাকা পৌঁছে যাই। অল্প সময়ে চমৎকার একটি উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হল আমাদের ভ্রমণপর্ব।