Written by: Samiul Hasan Himel
করোনার কারনে দীর্ঘদিন কোথাও যাওয়ার সুযোগ হচ্ছিলো না। হঠাৎ Bangladesh Travel Writers Association(BTWA) এর প্রেসিডেন্ট উজ্ব্বল ভাই জানালো মেঘমাটি রিসোর্টে একটা ট্রিপ প্ল্যান আছে, যাবো নাকি? শহরের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে এই লোভে রাজি হয়ে গেলাম।
![](https://www.bdtwa.com/wp-content/uploads/2021/02/meghmati-resort-1024x512.jpeg)
মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্টটি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় অবস্থিত। ঢাকা হতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টায় রিসোর্টে পৌঁছানো যায়। গ্রুপ ট্যুর বা যাদের নিজস্ব পরিবহন নেই তাদের জন্য সুবিধা হচ্ছে রিসোর্টের নিজ্বস পরিবহন ব্যবস্থা। ডে আউট বা নাইট আউট প্যাকেজের সাথে চাইলে গাড়িও নিতে পারবে। এতে করে আলাদা করে গাড়ি ঠিক করার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
আমরা ১৮ জন ছিলাম। আমাদের জন্য একটি ট্রাভেলার ভ্যান(ট্যুরিস্ট কোচ বাস) এবং একটি নোয়াহ গাড়ি পাঠানো হয়েছিলো। আমি ট্রাভেলার ভ্যানে ছিলাম। ভ্যানে চিপস এবং পানি রাখা ছিলো। গাজীপুর চৌরাস্তার জ্যাম বা সবুজ ফসলের মাঠ দেখতে দেখতে চিপস খেতে ইচ্ছে করলে যেন গাড়ি থামাতে না হয় সেজন্য এই ব্যবস্থা।
ময়মনসিংহ হাইওয়ে ছেড়ে আমরা যখন রিসোর্টের দিকে প্রবশ করলাম দু’পাশের পরিবেশ পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো। উন্মোচিত হলো দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ। যে সবুজ দেখার জন্য ছুটে আসা সেই সবুজের সন্ধান পাওয়া গেলো।
![](https://www.bdtwa.com/wp-content/uploads/2021/02/WhatsApp-Image-2021-02-05-at-3.06.30-PM-1024x512.jpeg)
রিসোর্টের রিসিপশনে কোভিড-১৯ এর কারনে নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে ভালো লাগলো। আমাদের সবার শরীরের তাপমাত্রা, অক্সিজেন লেভেল চেক করা হলো। এরমধ্যে ওয়েলকাম ড্রিংক্স চলে আসলো। রিসিপশনের কাজ শেষ করে আমরা প্রধান রিসোর্টে প্রবেশ করলাম।
রিসোর্টের দুইটি অংশ। একপাশে সুইমিং পুল এবং এসি কটেজ। অন্যপাশে পুকুর এবং নন-এসি কটেজ। পুরো রিসোর্টিতে শুধু আমরা থাকায় সবগুলো অংশই ঘুরে দেখার সু্যোগ হলো।
রিসোর্টটিতে নানান সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বিশাল খোলা মাঠ, ব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ, ফুটবল খেলার মাঠ, ইনডোর টেবিল টেনিস, হ্যামক, সুইমিং পুল, গাছে ঝোলানো দোলনা, অসংখ্য গাছ, পুকুর।
মজার ব্যাপার হচ্ছে দুপুরের খাবারের জন্য যে মাছ রান্না হবে চাইলে কেউ তা নিজেই জাল দিয়ে পুকুর থেকে ধরতে পারবে। কি দারুন!
রিসোর্টের সবকিছুই পছন্দ হলেও সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তিনটা জিনিস। এসি কটেজে খোলা আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমানোর ব্যবস্থা, সুইমিং পুল আর পুকুর ঘাট।
রিসোর্টের ডাইনিং স্পেস বেশ সুন্দর। ব্যুফে স্টাইলে খাবার ব্যবস্থা। সকালের নাস্তা, সিজনাল ফ্রুট মিক্স, দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাস্তা, রাতে বার-বি-কিউ সবকিছু বেশ ভালো ছিলো। তবে রুই মাছের বার-বি-কিউ না হয়ে কোরাল বা রুপচাঁদা বার-বি-কিউ হলে আরো বেশি জমতো।
রাতে ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর নাম না জানা কোন পাখির হঠাৎ হঠাৎ ডেকে উঠা ছাড়া অন্য কোন শব্দ পায় নি। রাতের এমন নিস্তব্ধতার সাথে বহুদিন দেখা না হওয়ায় প্রথমে কেমন ঘোর ঘোর লাগছিলো।
দিনভর টেবিল টেনিস, সাঁতার কাটা, ব্যাডমিন্টন খেলে ক্লান্ত অবসান্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার কথা থাকলেও মতি ভাইয়ের গান শোনার লোভে সবাই পুকুর ঘাটে জড়ো হলাম। মতি ভাইয়ের গানের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা জমে উঠলো।
পরদিন সকালের নাস্তা করে আমরা ঢাকার পথে রওনা হলাম। কিভাবে করে যে একটি দিন কেটে গেলো তা যেন টেরই পেলাম না। ইচ্ছা হচ্ছিলো আরো একটি রাত থাকি। মনে হচ্ছিলো কিছুই যেন দেখা হলো না…