লিখেছেন রাকিব হাসান
আজকের থেকে ঠিক তিন বছর আগের কথা। খুব বেশি দিন হয় নি ইউরোপে পা পড়েছে। চারিদিকের পরিবেশটাকে তখনও ভালো মতো বুঝে উঠতে পারি নি। মফস্বল কিংবা গ্রামাঞ্চল থেকে হঠাৎ করে ঢাকা শহরে আসলে যে রকম অবস্থা হয় আমার অবস্থাও ঠিক একই রকম।
সত্যি কথা বলতে গেলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত রক্ষণশীল। ইউরোপিয়ানদের মতো আমরা এখনও সেভাবে উদার হয়ে উঠতে পারি নি, বেশ কিছু গদবাঁধা জিনিসের মধ্যে আমরা সকলে আবদ্ধ। তাই আচমকা যখন আমরা পাশ্চাত্য ইউরোপিয়ান সমাজ ব্যবস্থায় পা রাখি; কেনও জানি আমাদের মাঝে এক ধরণের অস্বস্তি কাজ করে। এর সাথে যোগ হয় একাকিত্ব, এ কারণে বিদেশে আসার পর বেশ লম্বা সময় অনেকে বিষণ্ণতার চাদরে নিজেদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেন। ইউরোপে আসার পর বেশ কয়েক মাস আমার মাঝে এমন একটা অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিলো।
তবে লাইফে টার্নিং পয়েন্ট আসে যখন রোমানিয়া ভ্রমণে যাই। জীবনানন্দ দাশ তাঁর এক কবিতায় লিখেছিলেন:-
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরেঅনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতেসেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।”
কবির সে কবিতার মতো আমার জীবনেও প্রশান্তি বয়ে এনেছিলো রোমানিয়া সফর। ইউরোপে কোনো দেশই আমার মাঝে এতোটা তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে নি রোমানিয়া যেমনটি পেরেছিলো। বিশেষ করে ইউরোপের অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে আমার কাছে এতোটা আন্তরিক আর বন্ধুবাৎসল মনে হয় নি রোমানিয়ানদের যতোটা মনে হয়েছে।
রোমানিয়ার সে সুখকর অভিজ্ঞতা থেকেই একটু একটু করে পরিব্রাজক হয়ে উঠার চেষ্টা করা। যার ধারবাহিকতায় এ জাগরেব সফর।
১৯৯১ সালে বিশ্বের বুকে ক্রোয়েশিয়া নামক নতুন যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তার রাজধানী হচ্ছে এ জাগরেব। সাভা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরটিকে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য ইউরোপের মধ্যাকার সংযোগস্থল হিসেবে অনেকে স্বীকৃতি দেন।
“স্লোভেনিয়া” এবং “ক্রোয়েশিয়া” দুইটি রাষ্ট্রই একে-অন্যের প্রতিবেশি। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর “যুগোস্লাভিয়া” নামক যে দেশটি গঠিত হয়েছিলো; স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার উভয়ই সে যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিলো। জাতিগতভাবে তাই স্লোভেনিয়ানদের মতো ক্রোয়েশিয়ানরাও সাউদার্ন স্লাভ হিসেবে পরিচিত এবং স্লোভেনিয়ার সাথে ক্রোয়েশিয়ার ভাষারও খুব একটা পার্থক্য নেই। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও দুইটি দেশের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান, এতো কিছুর পরেও স্লোভেনিয়ার সাথে ক্রোয়েশিয়ার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর প্রকৃতির। আড্রিয়াটিক সাগরসহ বেশ কিছু স্থানের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এ দুই দেশের মাঝে বৈরিতা বিদ্যমান। বর্তমানে স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার উভয়ই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করেছে। স্লোভেনিয়া সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে পারলেও ক্রোয়েশিয়া এখনও তেমনটি পেরে উঠে নি। ক্রোয়েশিয়ানদের একাংশের দাবি, স্লোভেনিয়ার কারণে ক্রোয়েশিয়া এখনও সেনজেন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠাতা করতে পারছে না। স্লোভেনিয়ানরা ক্রোয়েশিয়ানদের পছন্দ করে না এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি একইভাবে ক্রোয়েশিয়ানরা স্লোভেনিয়ানদের আড় চোখে দেখেন সব সময়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে পৃথিবীতে স্লোভেনিয়াকে সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দেশটির নাম হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া, একইভাবে ক্রোয়েশিয়াকে সর্বপ্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দেশটির নাম হচ্ছে স্লোভেনিয়া। তারপরেও কেনও স্লোভেনিয়ান এবং ক্রোয়েশিয়ান এ দুই জাতিগোষ্ঠীর মানুষ একে অন্যকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন সেট প্রশ্নের উত্তর তিন বছরেও বের করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে নি।
সৌভাগ্যবশতঃ সে বছর পহেলা বৈশাখের দিনটি পড়েছিলো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। তাই জাগরেব ভ্রমণের জন্য পহেলা বৈশাখের দিনটিকে আদর্শ মনে হলো।
স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা থেকে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের দূরত্ব ৭৩ মাইলের কাছাকাছি, ট্রেনে লুবলিয়ানা থেকে জাগরেব পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
১৩ই এপ্রিল ছিলো শুক্রবার, স্বাভাবিকভাবে শুক্রবারে ইউনিভার্সিটির চাপ থাকে। কর্মব্যস্ত দিনের পাট চুকিয়ে তাই গোধূলিলগ্নে ছুটে পড়ি জাগরেবের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যা ০৭ টা ১৮তে লুবলিয়ানার সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন থেকে জাগরেবের উদ্দেশ্যে আমাদের ট্রেন ছেড়ে যাওয়া। লুবলিয়ানা থেকে জাগরেব পর্যন্ত যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট খরচ পড়েছিলো ২৮ ইউরো।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কিংবা সেনজেনভুক্ত যে কোনো দেশের ভিসা অথবা রেসিডেন্ট পারমিট থাকলে ক্রোয়েশিয়া ভ্রমণ করা যায়। ক্রোয়েশিয়াতে প্রবেশের সময় সেখানকার ইমিগ্রেশনের পক্ষ থেকে পাসপোর্টে কেবলমাত্র একটি অ্যারাইভাল সিল দেওয়া হয়। বিপরীতক্রমে ক্রোয়েশিয়া থেকে যখন অন্য কোনও দেশে প্রবেশ করা হয় তখন ইমিগ্রেশন পুলিশ পাসপোর্টে একটি ডিপার্চার সিল দেন।
জাগরেব যখন পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা রাত দশটার কাছাকাছি। আশেপাশে কোনো মানি একচেঞ্জ খোলা পেলাম না, বুকিং ডট কমের মাধ্যমে আগের থেকে থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলাম। জাগরেবের সিটি সেন্টারের কাছে মাইওয়ে হোস্টেল নামক একটি হোস্টেল রয়েছে, রাতটা সেখানে কাটাবো বলে স্থির করেছিলাম। এক রাত সেখানে অবস্থান করার জন্য আমাকে আট ইউরো ভাড়া গুণতে হয়েছিলো।
রাতের জাগরেব একেবারে আলাদা। স্লোভেনিয়ার বেশিরভাগ শহরে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া স্ট্রিট ক্লাব, পানশালা কিংবা ক্যাসিনোর দেখা মিলে না। জাগরেবে পরিস্থিতি একেবারে বিভিন্ন। জাগরেবের শহরতলীতে হরহামেশা তাই স্ট্রিট ক্লাব, পানশালা কিংবা ক্যাসিনোর দেখা পাওয়া যায়। জাগরেবের নাইট লাইফ অত্যন্ত জাঁকালো। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে সিনিয়র সিটিজেনদের সবাই নাইট লাইফের প্রতি আসক্ত। রাত যতোই গভীর হোক না কেনও, স্ট্রিট ক্লাব, পানশালা কিংবা ক্যাসিনোগুলোতে জনসমাগমের অভাব হয় না কখনও। রাকিয়া ক্রোয়েশিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়, রাকিয়াতে অ্যালকোহলের পরিমাণ শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ।
ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় মুদ্রার নাম ক্রোয়েশিয়ান কুনা, দুর্ভাগ্যবশতঃ আমার কাছে কোনো ক্রোয়েশিয়ান কুনা ছিলো না। আশেপাশের মানি একচেঞ্জগুলোও বন্ধ, তাই কীভাবে হোস্টেলে থাকার বিল পে করবো সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তার উদ্রেক হলো। হোস্টেলে যখন চেক ইন করি তখনই ম্যানেজারকে সব কিছু বিস্তারিতভাবে বলার চেষ্টা করি। হোস্টেলের ম্যানেজার আমার কথা শোনা মাত্র আমাকে কিছু ক্রোয়েশিয়ান কুনা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলেন। তাঁকে আমি ২০ ইউরোর একটি নোট দিলাম, বিনিময়ে তিনি আমাকে ১৬০ ক্রোয়েশিয়া কুনা প্রদান করলেন। সে সময় এক ইউরোর বিপরীতে ক্রোয়েশিয়ান কুনার বাজার দর ছিলো ৭.১০ কিন্তু তিনি আমাকে প্রতি ইউরোর বিপরীতে ৮ ক্রোয়েশিয়ান কুনা দিয়েছিলেন। আমি তাঁকে ইন্টারনেট থেকে ইউরোর বিপরীতে ক্রোয়েশিয়ান কুনার প্রকৃত বাজার দর দেখালাম এবং বাড়তি অংশটুকু তাঁকে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তিনি আমার থেকে অতিরিক্ত কুনা ফেরত নিলেন না। ১৬০ ক্রোয়েশিয়ান কুনার মধ্য থেকে তাঁকে ৭০ ক্রোয়েশিয়ান কুনা প্রদান করলাম হোস্টেলে থাকার খরচ হিসেবে।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষে শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছিলো। তাই হালকা ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোররাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো, এ সময় ভীষণ তৃষ্ণা পাচ্ছিলো। কেনও জানি বারবার কোকাকোলা পান করার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলো, হোস্টেলের নিচে ছোটো একটা বার ছিলো। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত তিনটা কিংবা সাড়ে তিনটা হবে। এতো রাতেও দেখলাম বারের ভেতর মানুষ গিজগিজ করছে। মিউজিকের তালে তালে তরুণ তরুণীরা অ্যালহোকল পান করছে আর নেচে যাচ্ছে। বয়স্করা পড়ে আছে জ্যাকপট নিয়ে। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশগুলোতে শুক্রবার হচ্ছে সপ্তাহের শেষ কর্মব্যস্ত দিন। এজন্য শুক্রবারের রাত মানেই বাড়তি উন্মাদনা।
বারের থেকে কাচের বোতলের কোকাকোলা কিনলাম, বাহিরের দোকানগুলোর চেয়ে বারগুলোতে সবকিছুর দাম তুলনামূলভাবে চওড়া। গলাটাকে কোনও রকম ভিজিয়ে ছুটে পড়লাম বিছানার দিকে। আবারও ঘুম, সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠেই সময় নষ্ট না করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। সব কিছু গুছিয়ে ম্যানেজারের কাছে চাবি বুঝিয়ে হোস্টেল থেকে চেক আউট করলাম। বিদায়লগ্নে স্মৃতি হিসেবে তাঁর সাথে কিছু ছবি রাখলাম এবং তাঁকে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানালাম।
ইউরোপের অন্যান্য রাজধানী শহরের তুলনায় জাগরেব আয়তনের দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। মোটামুটিভাবে পায়ে হেঁটে পুরো শহর ঘুরে দেখা যায়।
যাতায়াতের জন্য জাগরেবের বেশিরভাগ বাসিন্দা ট্রামের ওপর নির্ভরশীল, তবে জাগরেবের পথে-প্রান্তরে সচরাচর যে ধরণের ট্রাম দেখা যায় সেগুলো একেবারে ভিন্ন। “নিউ ইয়র্ক” এ নামটি শুনার সাথে সাথে আমাদের চোখের সামনে হলুদ রঙের বিভিন্ন ক্যাবের ছবি ভেসে উঠে, লন্ডনের নাম উচ্চারিত হলে বারবার যে জিনিসটি আমাদের সবার মাথায় ঘুরপাক খায় সেটি হচ্ছে লাল রঙের ডবল ডেকার বাস আর ঢাকা শহর কিংবা কলকাতার ঐতিহ্যবাহী পরিবহণ হচ্ছে রিকশা। ঠিক একইভাবে নীল রঙের এ সকল ট্রামকে জাগরেবের ঐতিহ্যবাহী পরিবহন বললেও ভুল হবে না। এমনকি ইন্টারনেটে অনেক সময় জাগরেব লিখে সার্চ করলেও নীল রঙের এ সকল ট্রামের ছবি মাঝে-মধ্যে প্রদর্শিত হয়।
তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অন্যান্য শহরের তুলনায় জাগরেবের রাস্তাঘাট বেশ সরু। শহরটিকেও আমার কাছে বেশ ঘিঞ্জি মনে হয়েছে।
জাগরেবে জনবসতির ইতিহাস অত্যন্ত পুরাতন, আনুমানিক প্রথম থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো এক সময় রোমানদের হাত ধরে জাগরেব থেকে সাড়ে নয় মাইল দক্ষিণ-পূর্বে আন্দাওটোনিয়া নামক এক শহরের গোড়াপত্তন হয়। বর্তমানে এ শহরটির নাম সিচিটারয়েভো। ১০৯৪ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিতেও জাগরেবের নাম পাওয়া গিয়েছে। ষোড়শ শতাব্দী থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে জাগরেব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, স্লোভেনিয়া ও মেসিডোনিয়া সম্মিলিতভাবে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন গঠন করে।জাগরেবকে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের অন্তর্গত সোশ্যালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অব ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রোয়েটরা স্বাধীনতার ডাক দেয় কিন্তু জার্মানির নাৎসি বাহিনী এবং ইতালিয়ান সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তাঁদের সে স্বাধীনতা আলোর মুখ দেখে নি। জার্মানির নাৎসি বাহিনী এবং ইতালিয়ান সেনাবাহিনী সম্মিলিতভাবে জাগরেব অধিগ্রহণ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটে এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ক্রোয়েটরা যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮০ সালে যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো মৃত্যুবরণ করেন। মার্শাল টিটোর মৃত্যুর পর সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এবং নিজেদের মধ্যাকার অন্তর্কলহের কারণে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশনের বিভিন্ন অংশের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয় যার প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া ও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে বের হয়ে নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়। স্লোভেনিয়া এবং মেসিডোনিয়ার জন্য স্বাধীনতার পথ যতোটা সহজ ছিলো ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনাকে স্বাধীনতা পেতে চওড়া মূল্য দিতে হয়। সার্বরা তাঁদের স্বাধীনতার দাবিকে অস্বীকৃতি জানায়, শুরু হয় যুগোস্লাভ যুদ্ধ। যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের সময় ক্রোয়েশিয়ার বিভিন্ন অংশের মতো রাজধানী জাগরেবেও ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে।
যুগোস্লাভ যুদ্ধের পর ধীরে ধীরে এ শহরটি ঘুরে দাঁড়াতে থাকে, সম্পূর্ণ নতুনভাবে এ শহরটিকে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এক সময় যদিও ক্রোয়েশিয়া কমিউনিস্ট শাসনের অধীনে ছিলো, তারপরেও জাগরেবে কমিউনিস্ট শাসনামলের নিদর্শন তেমন একটা দেখা যায় না। জাগরেবের ওল্ড টাউনও তাই খুব একটা সমৃদ্ধ নয় যেমন সমৃদ্ধের কথা আমরা পোল্যান্ডের ক্র্যাকো, এস্তোনিয়ার রাজধানী তাল্লিন কিংবা চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের ওল্ড টাউনের ক্ষেত্রে বলতে পারি।
দৃষ্টিনন্দন সামুদ্রিক সৈকত, ছোটো বড় কিছু দ্বীপ এবং ছোটোবড় বিভিন্ন পাহাড়-পর্বতের জন্য ক্রোয়েশিয়া এক জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। বলা হয়ে থাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে গোটা পৃথিবীতে ক্রোয়েশিয়ার সী বীচগুলো না কি তিন নম্বর স্থানে রয়েছে। আড্রিয়াটিক সাগরের নীল জলরাশি এ সকল সমুদ্র সৈকতের প্রাণ। সরকারি হিসেবে অনুযায়ী চল্লিশ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট ক্রোয়েশিয়াতে প্রত্যেক বছর গড়ে ১০.২৫ মিলিয়ন পর্যটক বেড়াতে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। অথচ সে দেশটির রাজধানী শহরটি একেবারে সাদামাটা।
পৃথিবীর প্রত্যেক শহরের একটি নিজস্ব ল্যান্ডমার্ক থাকে, এ ল্যান্ডমার্ক দ্বারা শহরটিকে পৃথিবীর অন্যান্য শহরের থেকে আলাদা করা হয় এবং বলাবাহুল্য এ ল্যান্ডমার্কটি উক্ত শহরের প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের ঢাকা শহরের ল্যান্ডমার্ক হচ্ছে মতিঝিলের শাপলা চত্বর, ঠিক একইভাবে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের ল্যান্ডমার্ক হচ্ছে ক্যাথেড্রাল অব জাগরেব। ক্যাথেড্রাল অব জাগরেবকে ঘিরে শহরটির গোড়াপত্তন। ১০৯৩ সালে হাঙ্গেরিয়ান রাজা লাদিসলাউস এ অঞ্চলের আর্চবিশপকে শিশাক থেকে জাগরেবে স্থানান্তরিত করেন। সে অনুযায়ী জাগরেবের অবশিষ্ট চার্চকে তিনি ক্যাথেড্রালে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। তাঁর মৃত্যুর পর জাগরেবের এ ক্যাথেড্রালের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং আনুমানিক ১২১৭ সালে হাঙ্গেরিয়ান রাজা দ্বিতীয় অ্যান্ড্রুর শাসনামলে এ চার্চটির ক্যাথেড্রালটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন বহিঃশত্রুর আক্রমণে এ চার্চটি কয়েকবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে, ১৮৮০ সালের ভূমিকম্পেও এ চার্চটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বিভিন্ন সময়ে এ ক্যাথেড্রালটিকে সংস্কারও করতে হয়।
বলকান উপদ্বীপে যে সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন তাদের মধ্যে একমাত্র ক্রোয়েশিয়ানরা ক্যাথলিক খ্রিস্টানিটির অনুসারী। রোমান শাসকদের আধিপত্যের কারণে ক্রোয়েশিয়াতে ক্যাথলিক চার্চের বিস্তৃতি ঘটেছে।
বলকান পেনিনসুলার অন্যান্য দেশের মতো ক্রোয়েশিয়ানরাও জাতি হিসেবে অত্যন্ত রক্ষণশীল, ক্রোয়েশিয়ার সমাজ ব্যবস্থা এবং রাজনীতিতে তাই ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব প্রবল। এখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করেন এবং নিয়মিত চার্চে যাতায়াত করেন। কমিউনিস্ট শাসন সেখানকার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে তেমন একটা পরিবর্তন আনতে পারে নি।
ক্যাথেড্রাল অব জাগরেবের মতো শহরটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উপাসনালয়ের মধ্যে রয়েছে সেইন্ট মার্ক’স চার্চ। আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এ চার্চটি নির্মাণ করা হয়, এখন পর্যন্ত জাগরেবে অবশিষ্ট মধ্যযুগীয় নিদর্শনের মধ্যে সেইন্ট মার্ক’স চার্চ অন্যতম। সেইন্ট মার্ক’স চার্চের পাশে ক্রোয়েশিয়ার ন্যাশনাল পার্লামেন্টের অবস্থান।
সবমিলিয়ে জাগরেবে ২৮টির মতো মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি রয়েছে। এর মধ্যে দ্যা মিউজিয়াম অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস, জাগরেব সিটি মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অব কনটেম্পোরারি আর্টস, মিমারা, আর্ট প্যাভিলিয়ন অব জাগরেব এবং মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। “মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস” এ ধারণাটি একেবারে নতুন আমাদের অনেকের কাছে। মূলত ব্রেক আপ কিংবা ডিভোর্সের পর প্রেমিক-প্রেমিকারা কিংবা দম্পতিরা তাঁদের প্রিয় মানুষের দেওয়া উপহারগুলো এ মিউজিয়ামে দান করে থাকে। বিশ্বে অন্য কোনো শহরে এ ধরণের কোনো মিউজিয়ামের অস্তিত্ব নেই, তাই যে সকল দর্শনার্থী জাগরেবে আসেন সবার মূল লক্ষ্য থাকে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপস ভ্রমণ করা। মিউজিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করতে ৪০ ক্রোয়েশিয়ান কুনার প্রয়োজন হয়।
ইস্তাম্বুলের তাসকিম স্কয়ার, কায়রোর তাহেরির স্কয়ার, লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ার কিংবা নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের মতো জাগরেবে রয়েছে ব্যান ইয়ালচিচ স্কয়ার। নতুন বছর উদযাপন থেকে শুরু করে যে কোনো জাতীয় উৎসবে শহরবাসীরা এ স্থানে একত্রিত হন। প্রাক্তন ক্রোয়েট জেনারেল ইয়োসিপ ইয়ালচিচের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এ স্থানটির নাম রাখা হয়েছে ব্যান ইয়ালচিচ স্কয়ার। তাঁর স্মরণে এ স্থানে একটি ভাস্কর্য রয়েছে। পর্যটকেরা জাগরেবে বেড়াতে আসলে এ ভাস্কর্যের সামনে ছবি তোলার চেষ্টা করেন।
ব্যান ইয়ালচিচ স্কয়ার থেকে সাড়ে তিন মাইল পশ্চিম বারবার ভ্র্যাপচে পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটির নাম ইলিসা। জাগরেবের দীর্ঘতম সড়কের মধ্যে ইলিসা একটি। এমনকি জাগরেবের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা হিসেবেও এ সড়কটিকে বিবেচনা করা হয়। ইলিসা মূলত একটি শপিং স্ট্রিট, তাই কেনাকাটার প্রতি যাদের বিশেষ ঝোঁক রয়েছে তাঁদের অনেকের কাছে ইলিসা পছন্দের একটি জায়গা। নামীদামী শপিংমল থেকে শুরু করে আধুনিক ও বিলাসবহুল বিভিন্ন অট্টালিকা ও রেস্টুরেন্টে পরিপূর্ণ গোটা ইলিসা। দুপুরের খাবারের জন্য এ স্ট্রিটতে অবস্থিত ফ্রাইস ফ্যাক্টরি নামক রেস্টুরেন্টের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। কেএফসি, ম্যাকডোনাল্ডস কিংবা বার্গার কিং এর মতো ফ্রাইস ফ্যাক্টরি ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম প্রসিদ্ধ ফাস্টফুড চেইন। মাত্র বিশ ক্রোয়েশিয়ান কুনায় প্ৰণ ফ্রাই এর সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং কোকাকোলা মিলিয়ে দুপুরের খাবারটি অত্যন্ত উপভোগ্য ছিলো। সাথে পরিবেশন করা হয়েছিলো মেডিটারনিয়ান সস নামক এক ধরণের বিশেষ সস। এক কথায় বলতে গেলে অমৃত, জীবনে এর আগে কখনও এতো সুস্বাদু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিংবা প্ৰণ ফ্রাই খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিলো না কখনও।
গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে নিকোলা টেসলা একজন। অলটারনেটিং কারেন্ট থেকে শুরু করে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তাঁর হাতে গড়া। অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতো সার্বিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া প্রতিবেশি এ দুই রাষ্ট্রের মাঝে বৈরিতার আরও একটি বিষয় হচ্ছে এ নিকোলা টেসলা। নিকোলা টেসলার জন্ম ১৮৬৫ সালের ১০ ই জুলাই স্মিলিয়ান নামক স্থানে। সে সময় স্মিলিয়ান ছিল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে। তখন সার্বিয়া কিংবা ক্রোয়েশিয়া নামে পৃথক কোনও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। বর্তমানে স্মিলিয়ান ক্রোয়েশিয়ার অন্তর্গত ছোট্ট একটি গ্রাম। এ কারণে ক্রোয়েশিয়ানরা দাবি অনুযায়ী নিকোলা টেসলা ছিলেন একজন ক্রোয়েশিয়ান। অন্যদিকে নিকোলা টেসলার বাবা এবং মা উভয়ই ছিলেন অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা এবং ক্রোয়েশিয়া এ চার দেশের মানুষের ভাষা বলতে গেলে প্রায় কাছাকাছি ধরণের, পার্থক্য কেবলমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসে। ক্রোয়েশিয়ানরা ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী। সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর অধিবাসীরা অর্থোডক্স চার্চের অনুসরণ করে। এ কারণে সার্বিয়ানরা মনে করে, নিকোলা টেসলা ছিলেন একজন সার্বিয়ান। নিকোলা টেসলার স্মরণে জাগরেবে নির্মিত হয়েছে নিকোলা টেসলা টেকনিক্যাল মিউজিয়াম, বিজ্ঞানপ্রেমীরা চাইলে এ যাদুঘরটি ঘুরে দেখতে পারেন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য জাগরেবের মূল আকর্ষণ হতে পারে নিকোলা শুবিচ জ্রিনস্কি স্কয়ার পার্ক কিংবা মাক্সিমির পার্ক। বসন্তে পার্ক দুইটি নতুন পত্রপল্লবে ভরে উঠে, তাই এ সময় জাগরেবে বেড়াতে গেলে এ দুইটি পার্কের যে কোনো একটিতে যেতে পারেন সময় কাঁটাতে।
অর্গানিক ফুড যারা ভালোবাসেন তাদের জন্য জাগরেবের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হতে পারে ডোলাটস মার্কেট। স্থানীয়ভাবে একে ফারমার্স মার্কেট নামেও ডাকা হয়, ব্যান ইয়ালচিচ স্কয়ার হতে কয়েক মিটার দূরত্বে এ মার্কেটের অবস্থান। এখানকার বেশিরভাগ দোকান জাগরেবের নিজস্ব ভঙ্গিতে নির্মিত। কৃষকেরা নিজেদের উৎপাদিত মাছ, মাংস, ফল ও শাক-সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন এ বাজারে।
এটা ঠিক যে বুখারেস্ট কিংবা আমস্টারডাম অথবা রেইকইয়াভিক কিংবা ইস্তাম্বুল আমার মনে যে ধরণের আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে, জাগরেব তেমনটি পারে নি। কেননা জাগরেব গতানুগতিক ধাঁচের একটা শহর, পুরো ইউরোপ জুড়ে এরকম অসংখ্য শহর রয়েছে। তবে জাগরেবের অভিজ্ঞতা একটা দিক থেকে ছিলো একেবারে আলাদা। রূপ লাবণ্যের দিক থেকে ক্রোয়েট নারীরা অনন্য সাধারণ। উজ্জ্বল ফর্সা গাত্রবর্ণ, উজ্জ্বল সোনালি চুল, নীলাভ চোখের পাপড়ি, অপেক্ষাকৃত উঁচু স্তন ও ঢেপঢেপে নিতস্ব সব মিলিয়ে একশোতে একশো পাওয়া মতো। একেবারে পারফেক্ট গ্ল্যামার গার্ল বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি। চারিদিকে একসাথে অসংখ্য ডানাকাটা পরীর দেখা মিলবে যে নিজেকে সামলানো অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়বে। ক্রোয়েশিয়াতে মোটামুটিভাবে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সবাই ইংরেজিতে পারদর্শী, তাই ভাষাগত কোনো প্রতিবন্ধকতায় আপনাকে পড়তে হবে না এটুকু বলা যায়।
২০১৮ সালে প্রথম যখন আমি জাগ্রেবে যাই তখন ক্রোয়েশিয়া সম্পর্কে আমার মাঝে যথেষ্ট ইতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছিলো। সে সময় ক্রোয়েশিয়াতে ইউরোপের বাহিরে অন্যান্য দেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টদের তেমন একটা চোখে পড়তো না। সলো ট্রাভেলার হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত আনন্দের সাথে পুরো ট্যুরটিকে উপভোগ করেছিলাম আর এটা সম্ভব হয়েছে একটা কারণে। ক্রোয়েশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ যাদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো সবাই ছিলেন ফ্রেন্ডলি এবং হেল্পফুল। তবে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিন বছর পর আজকের এ দিনে যখন ক্রোয়েশিয়াকে দেখি মনের ভেতর এক ধরণের হতাশা জাগ্রত হয়। ক্রোয়েশিয়াতে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধবও রয়েছেন, তাঁদের সাথেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। ক্রোয়েশিয়াতে বর্তমানে উগ্র এবং কট্টরপন্থি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে প্রবলভাবে যার প্রভাব পড়েছে দেশটির সরকার ব্যবস্থায়। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝেও অভিবাসনবিরোধী মনোভাব আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। এমনকি সে সময় ক্রোয়েশিয়াতে জীবন-যাত্রার ব্যয়ও ছিলো তুলনামূলকভাবে কম। অথচ তিন বছর পর এসে আজকের দিনে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ক্রোয়েশিয়ার ছবি দেখতে পাই যা যে কারও জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।