লিখেছেন দিলরুবা নাসরিন
গাম্বিয়া, নভেম্বর, ২০১৬। আবার সেই একই বিল্ডিং এ, সেই ১০৩ নাম্বার রুমে—যেখানে তার সাথে প্রথম দেখা ! মনে মনে প্রমাদ গুনলাম, আট বছর আগের স্মৃতি মাথায় ভর করছে। যদিও এখন নভেম্বর মাস, তার সাথে দেখা হবার সম্ভাবনা কম। গাম্বিয়ানদের জন্য এখন বেশ ঠাণ্ডার সময়, এরই মধ্যে শীতের কাপড় পরা শুরু করেছে তাঁরা – তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মাত্র ! ওদের কাছে এপ্রিল-মে মাসের গরম কে শুধু গরম মনে হয়। ওই দুটো মাস আমি পারতপক্ষে গাম্বিয়া যাই না। কিন্তু ২০০৮ সালের এপ্রিলে আমাকে জরুরী প্রয়োজনে গাম্বিয়া যেতেই হল। মাথার ঘিলু গলে যাওয়া গরম– তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১০৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। সমুদ্রতীর বানজুলে (Banjul) গরমটা তত গায়ে লাগেনি। কিন্তু বাসেতে পৌঁছে টের পেলাম- গরম কাহাকে বলে। আমাদের ক্যাম্পাস (এম আর সি-মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল, বাসে) এর আশেপাশে বন জঙ্গল পুড়ছে। গাম্বিয়ান সহকর্মীরা আগাম সতর্কবাণী জানিয়েছে যেন সন্ধ্যার পরে সচেতন হয়ে চলাফেরা করি- ক্যাম্পাস এর ভিতরে সাপের উপদ্রব। খুব বেশী পাত্তা দেইনি এই ভেবে যে ওরা বিদেশীদের ছোটখাট ব্যাপারেও একটু বেশী ভয় দেখায়, আমি মোটেও সেই গোত্রের বিদেশী না।
গেস্ট হাউজের দোতলায় ১০৩ নাম্বার রুমে আমার থাকার ব্যবস্থা। রুমের সাথে লাগোয়া বাথরুম আর কিচেন। গেস্ট হাউজের পিছনে গাম্বিয়া নদীর মাঝারী আকারের একটি শাখা, নদীর পাড় ঘেঁষে বাঁশ ঝাড়। নদী এবং আমার রুমের মাঝে বিশ হাত চওড়া উঠোন। রুমের দরজা খুলে বাঁশ ঝাড়ের ফাঁক দিয়ে গাম্বিয়া নদীর এপার ওপার দেখি সকাল বিকাল—সে এক অন্য রকম ভালো লাগা। ব্রিটিশ এক সহকরমী এই ক্যামপাসেই থাকেন পরিবার নিয়ে, তাঁর সখের নৌকাটি নদীর ঘাটে বাঁধা থাকে—কখনো সময় পেলে আমরা নৌকাভ্রমণে যাই। বাসেতে পৌঁছানোর পরদিন বেশ সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল- ভাবলাম কাজে বেরুবার আগে সকালের নদীর স্নিগ্ধ রূপটা একনজর দেখে চোখ জুড়াই। দরজা খুলেই আমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলাম। দরজার ঠিক সামনে এক অথিতি—ঘন কালো শরীর কে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুধু মাথাটা উঁচু করে রুমে ঢোকার অপেক্ষায়। আমার চিৎকারে এক পরিছন্নতাকর্মী ছুটে এসে তাঁর হাতের কোদালের ঘায়ে অথিতির মাথা থেতলে দিলেন। মজার ব্যাপার হল যিনি মারলেন তিনি বেশ নির্বিকার, জানালেন—“তোমার কপাল ভাল, তার গায়ের উপর পা’টা ফেলনি। এই এক জিনিস এরা একেবারে সহ্য করেনা”! তাতো অবশ্যই -কেই বা করে! এই গোত্রের শীত-গরম, সুখদুঃখ, আরাম-আয়েস সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা ছিলনা—এ উপলক্ষে তাঁর কাছে বেশ গ্যান অর্জন করলাম- “আমার অথিতি একজন বাচ্চা পাফ অ্যাডার (অজগরের বাচ্চা)। সাব সাহারান আফ্রিকায় এদের প্রচুর দেখা যায় এবং তীব্র বিষের কারণে এদের কামড়ে প্রতিবছর এখানে প্রচুর মানুষ মারা যায়। সাধারনতঃ এরা বন-জঙ্গলে থাকে। প্রখর রোদে সব জঙ্গল পুড়ছে ক’দিন ধরে, তাই একটু ঠাণ্ডা বাতাস খেতে এরা আমাদের ক্যাম্পাসে বেড়াতে এসেছে। বাসেতে আমাদের ক্যাম্পাসেই শুধু শীতাতপ নিয়নন্ত্রনের ব্যবস্থা আছে, অতএব ওরা এখানে না এসে আর কই যাবে”! বেশ কিছুটা সময় লাগলো ধাক্কাটা কাটাতে-একবার ভাবলাম, ফিরে যাই! তারপর মনে হল, আমাদের টীমের পঞ্চাশ জনের বেশী কর্মী এখানে প্রতিদিন কাজ করে—ওরা যদি থাকতে পারে, আমিও নিশ্চয় পারবো। কিন্তু মাথা থেকে সকালের ভয়ংকর ছবিটা যাচ্ছে না—বরং তার সাথে আরও কিছু যোগ হচ্ছে। তিনি যদি সিঁড়ি বা দেয়াল বেয়ে দোতলা পর্যন্ত উঠতে পারেন, বাথরুমের জানালা দিয়ে অনায়াসে রুমের ভেতরেও ঢুকে যেতে পারবেন। এখানে বাথরুমে কোন এক্সজস্ত ফ্যান না থাকায় ছোট্ট জানালাটা খোলাই থাকে। বিপদের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ—খবর নেয়া দরকার সাপে কাটলে এখানে জীবন রক্ষার ব্যাবস্থা কি। গাম্বিয়া “নো প্রবলেম” এর দেশ, তাঁদের কাছে যে কোন সমস্যাই খুব ছোট। তাই এর ওর সাথে আলাপ না করে আমাদের গবেষণা সমন্বয়কারীকেই ডেকে পাঠালাম, তিনি একজন চিকিৎসকও বটে। জিজ্ঞেস করলাম— যদি আমাকে আজ সাপে কাটতো, তোমরা কি করতে? সে খুব একটা পাত্তা দিলনা—“কাটতো না, তুমি তো তার গায়ে পা দাওনি”। কিন্তু নীচের দিকে না তাকালে আমি তার গায়ে পা দিয়ে ফেলতেও পারতাম। “ওহ! সেই ক্ষেত্রে আমরা শক্ত রশী দিয়ে সাপের কামড়ের জায়গাটির উপরে নীচে শক্ত ভাবে বেঁধে দিতাম যাতে বিষ না ছড়ায়। এরপরে তোমাকে ফাজারা পাঠিয়ে দিতাম—ওখানেই একমাত্র এনটি–ভেনম আছে”। শুনে ঢোঁক গিললাম –ফাজারা থেকে আমি গতকাল সন্ধ্যায় মাত্র এসেছি, এখানে আসতে সময় লেগেছে মাত্র দশ ঘণ্টা। বাসে থেকে ফাজারার পথে তিনটা ফেরী পাড়ি দিতে হয়, ফেরীর ট্রাফিক এর অবস্থার প্রেক্ষিতে কখনো কখনো সেখানে পৌঁছাতে বারো ঘণ্টা সময়ও লেগে যায়। সাপের বিষ নিয়ে বারো ঘণ্টা বেঁচে কি থাকা যাবে? সে বলল “২৫-৩০% সম্ভাবনা থাকে মারা যাবার। কিন্তু তাও তোমার বাঁচার সম্ভাবনাই বেশী”। তাইতো ! এখনো ৭০% বাঁচার সম্ভাবনা—খারাপ কি! কিছুটা আশ্বস্ত হবার চেষ্টা করলাম—যাক, এনটি–ভেনম পেলেই তো রক্ষা পেলাম! সে এবার চিন্তিত মুখে মাথা নাড়ল “ছোট্ট একটা সমস্যা আছে। এই এনটি –ভেনম প্রায় একশো বছর পুরনো—অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি এটি কাজ করে না—কাজ করার সম্ভাবনা ৫০-৫০”! তার মানে- ঔষধ কাজ না করলে আমার বাঁচার সম্ভাবনা কমে দাঁড়ালো ৩৫%। আমাকে চিন্তিত দেখে এবার সে ভরসা দিল “দুশ্চিন্তার কিছু নেই! ওটা যদি কাজ নাও করে, আর তুমি যদি ততক্ষণ বেঁচে থাক, তোমাকে আমরা ইউরোপে পাঠানোর ব্যাবস্থা করব”। তারপর বেশ গৌরবের সাথে জানাল “আমাদের এখান থেকে ইউরোপে সরাসরি ফ্লাইট আছে”। খুব বেশী আশ্বস্ত হতে পারলাম না, কারন ইউরোপের সেই সরাসরি ফ্লাইটেই আমি গাম্বিয়া আসা-যাওয়া করি। সপ্তাহে তিনদিন মাত্র ফ্লাইট থাকে। সর্প দংশনের পরেও যদি সেই তিনদিনের কোন এক দিন পর্যন্ত বেচে থাকা যায়, তবে ইউরোপ পৌঁছাতেও পারি। ইউরোপ পৌঁছে কি হবে সেটা জানার আগ্রহ আমার আপাতত শেষ। হিসাব-নিকাশ করে দেখেছি –বাঁচার আশা মোটামুটি শূন্যের কোঠায়! ঐ রুমেই আমার কাটল বাকী এক সপ্তাহ। তবে প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে আধাঘণ্টা সময় কাটতো রুম পর্যবেক্ষণে – খাটের নীচে, বাথরুমের শাওয়ারে, কিচেনের ফ্রিজে …।। এরপরে মশারীটা কঠিনভাবে বিছানার চারপাশে টানটান করে আঁটকে, প্রচণ্ড গরমেও বিছানার চাদর দিয়ে সারা শরীর মুড়ে, ঠিক বিছানার মাঝখানে গুটি সুটি মেরে রাত কাটিয়ে দিতাম। মাঝে বেশ ক’বছর এই পুরনো বিল্ডিং টিতে আমার আর থাকা লাগেনি, এম আর সি নতুন গেস্ট হাউস বানিয়েছে , আমার রুম সেখানে। কিন্তু ঘটনা ক্রমে এবার আমি সেই রুমে। দোষ আমারই – এবার ইলেকশান পরবর্তী ঝামেলার সম্ভাবনা শুনে খুব স্বল্প নোটিসে গাম্বিয়া এসেছি, এসে দেখি আমার রুম বেদখল! গাম্বিয়াতে দীর্ঘ ২২ বছর পর গণতন্ত্রের জোয়ার দেখে এসেছি। ফিরে এসেও আমার বারবার মনে পড়ছে গাম্বিয়ানদের উদ্দীপ্ত আশা-আকাংখার কথা। এক শুভাকাংখী জিগ্যেস করেছে—গাম্বিয়া ইলেকশান নিয়ে আমার এত দুশচিন্তা কেন- ও টি তো আর নিজের দেশ না। মাঝে মাঝে গিয়ে কাজ শেষে তো ফিরে আসি নিজের বাসায়—ওখানের ইলেকশানে কি হল না হল তাতে খুব কি কিছু আসে যায়? উত্তর দিতে গিয়ে ভীরযারা ছবির কথা মনে পড়ল–ভালো লাগার একটি ছবি। একটি অসাধারণ, নিঃস্বার্থ প্রেমের গল্প। কিন্তু আমার মনে দাগ কেটে গেছে ছবির শেষ দৃশ্যে ভীরের কথাগুলো – “এ আমার দেশ না, তবু কেন এ দেশের মাটি, রোদবৃষ্টি, সব আমার এত আপন মনে হয়”? জীবনের মূল্যবান দীর্ঘ ২২ টি বছর ভিনদেশে, দুঃসহ জীবন কাটানোর পরেও ভীর বলছিলেন—এই ভিন দেশের মাটির গন্ধ ঠিক যেন তাঁর অতি প্রিয়, পরিচিত দেশের মাটির গন্ধ। এখানকার সূর্য, বৃষ্টি, ঠাণ্ডা সবিই তাঁকে তাঁর দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। কাজের কারণে আমাকে নিয়মিত আফ্রিকার বেশ ক’টি দেশে যেতে হয়। আফ্রিকার আবহাওয়া, পরিবেশ, পরিবার, সংস্কৃতি –অনেক কিছুই একসময় আমার কাছে অচেনা ছিল। কিন্তু আফ্রিকান শিশুরা প্রথম দিন থেকেই আমার অতি চেনা—এরা আমার শিশুদের মতই ব্যাথা পেলে কাঁদে, আদর পেলেই নিমেষে ব্যাথা ভুলে খিলখিল করে হাসে, ছোট্ট ছোট্ট উপহারে খুশীতে ঝলমল করে। গাম্বিয়া সাগরের তীরে বসে যখন সূর্যাস্ত দেখি, তার সাথে আমার অতি প্রিয় কক্সবাজারের সূর্যাস্তের কোন পার্থক্য তো দেখিনা। আফ্রিকাতে রাস্তার পাশে খালে বিলে ফুটে থাকা শাপলাগুলো আমাকে আমার দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে পথের পাশে কচি তাল বিক্রি করে– দেখলেই আমি গাড়ী থামিয়ে এক কাঁদি তাল কিনি। মনের সুখে সকাল-দুপুর-রাত তাল এর নরম শাঁস খাই, আর মনে মনে ভাবি আমি বাংলাদেশে বসে আছি! আফ্রিকার অন্য দেশগুলোতে আমি কখনো দেশী কাউকে খুজে পাইনি—কিন্তু গাম্বিয়াতে বাসের মত ছোটো শহরটিতেও চারটি বাংলাদেশী পরিবার খুঁজে পেয়েছি—যাদের কারণে আমি বাংলায় কথা বলার আনন্দটাও পাই এখানে। আমি গেলে তারা এমনভাবে আথিথেয়তা করে মনে হয় বাপের বাড়ীর নায়রী পেয়েছে। এবার “থ্যাংকস গিভিং” এ নিজ পরিবার থেকে দূরে ছিলাম—মন একটু খারাপতো ছিলই। কিন্তু বাসেতে আমার বাংলাদেশী পরিবারগুলো আমার জন্য ডিনারের মহা আয়োজন করেছে—এরপরে কি আর কষ্ট থাকে? গাম্বিয়ার বাঞ্জুল এয়ারপোর্টে নামার পরই ভাল লাগাটা শুরু হয়ে যায়। বাংলাদেশী ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের এতো খাতির পৃথিবীর খুব কম জায়গাতে দেখা যায়। এখানে ডিপ্লোম্যাটিক লাউঞ্জ এর তত্তাবধায়ক উসমান সাহেব এমনভাবে খাতির-যত্ন করেন — মনে হয়, তিনি যেন আমার দেশকে সম্মান করে এগুলো করেন। এর পরেও এই দেশের ভালো – মন্দ কি আমাকে চিন্তিত করবে না! গাম্বিয়া থেকে ফিরে এসেছি এক সপ্তাহ হয়ে গেল— মনের অনেকটুকু জুড়ে ছিল গাম্বিয়ানদের স্বপ্নের ইলেকশান। এবারের ইলেকশান নিয়ে গাম্বিয়ানদের যে প্রাণের জোয়ার দেখে এলাম, ফলাফল না জানা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না। কে জানে—মারবেল গোণা ঠিকমত হবে কিনা। গাম্বিয়ার ইলেকশানে কোন ইলেকট্রনিক বা কাগজের ব্যালট পেপার নেই। ভোটিং সেন্টারগুলোতে প্রতি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জন্য আছে একটি করে প্রার্থীর ছবি সম্বলিত ড্রাম। ভোটারদের হাতে একটি করে মার্বেল থাকবে, পছন্দের প্রার্থীর ছবি সম্বলিত ড্রামটিতে তাঁরা মার্বেলটি ফেলবেন। সাক্ষরতার হার কম হবার কারণে এই অতি সরল ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই ব্যাবস্থায় যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও গাম্বিয়ান্ রা এ নিয়ে খুব চিন্তিত নয়। তাদের কথা অনুযায়ী– প্রেসিডেন্ট সাহেব নিজে ভোট না গুনলে আর কোন সমস্যা নেই, তবে তিনি (ইয়াহিয়া জামে) যে গুনবেন না- এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন! গত বাইশ বছর তাঁর টানা বিজয় দেখে হয়ত তাঁদের এই দুশ্চিন্তা! মার্বেলের এই অভিনব ব্যবহার আমাকে বেশ চমকিত করেছে। ছোটবেলা থেকে মার্বেলের প্রতি আমার আকর্ষণ। কাঁচের মার্বেলের ভেতরে রঙের কারুকার্য আমার ছোটমনে শিল্পীর চিত্রকর্মের মতই মনে হত। আর মার্বেলের বাজনা (টুং টাং নাকি ঝনঝন!) আমার কানে সংগীতের বাজনার চেয়ে কিছু কম শ্রুতিমধুর ছিল না। একটা বয়স পর্যন্ত আমি পাড়ার ছেলে বন্ধুদের সাথে মার্বেল খেলতাম। যখন আমাকে ভদ্র মেয়ে বানানোর পারিবারিক চাপাচাপি শুরু হয়ে গেল, তখন কাঁচের মার্বেল সংগ্রহ করা হয়ে গেল আমার উল্টা পাল্টা সখের একটি। মার্বেলের শব্দে যেন মোহ আছে! কাঁচের বোতলে অনেকগুলো মার্বেল নিয়ে আমি খুব ধীরে, মোলায়েম লয়ে একবার উচু, একবার নীচু করতাম- —জলতরঙ্গের মত সুর বাজত কানে। কখনো আবার একমুঠো মার্বেল নিয়ে গানের তাল দিতাম। মার্বেলের সাথে আমার ভাবের আদান প্রদান ছিল বাজনার মাধ্যমে। গাম্বিয়ার ‘মার্বেল ভোট’ তাই আমার মনে ভালো লাগার একটা সুর তৈরি করেছিল। কিন্তু ইলেকশানের একদিন আগে যখন গাম্বিয়ার সাথে বহিরবিশের সবরকম (ইন্টারনেট, টেলিফোন) যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল, মন খারাপ আর এড়ানো গেলনা। যেহেতু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও ইলেকশান পর্যবেক্ষণের অনুমতি ছিলনা, আন্তর্জাতিক মাধ্যম গুলোতেও কোন খবর পাচ্ছিনা। ভাবলাম –মার্বেল কি মন ভেঙ্গে দেবে এবার? না- অবশেষে সুখবরটি এল—২২ বছর পর গাম্বিয়ানরা গণতান্ত্রিক ভাবে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে। মার্বেল আমার মনের ভাষা এখনো পড়তে পারে।
লেখিকাঃ এপিডেমিওলজিস্ট, সেন্টার ফর ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, স্কুল অব মেডিসিন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর