Skip to content Skip to footer

কলকাতা থেকে ঢাকা

তড়িৎকান্তি রায়

হঠাৎ সুযোগ এল ঢাকা যাওয়ার। সঙ্গে আমার মেয়ে সোহিনী। আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাসে – বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থার সুপার লাক্সারি কোচে, ১০ এপ্রিল, সল্টলেকের করুণাময়ী আন্তর্জাতিক বাসআড্ডা থেকে। এর আগে দু-তিন দিনের প্রস্তুতি হয়েছিল – সোনালি ব্যাঙ্কে ডলার, ভিসা ও বাস টিকিটের বন্দোবস্ত। নিয়মমতো যাত্রার ঘণ্টাখানেক আগে পৌঁছালাম বাসআড্ডায়।

বাসআড্ডার ব্যবস্থা ছিল স্বাচ্ছন্দ্যময়। অপেক্ষা কক্ষে প্রচুর বসার সুযোগ, রয়েছে রেস্তোরাঁ, ওষুধের দোকান ও ট্রাভেল এজেন্সি। দুইতলায় রয়েছে অল্প ভাড়ায় রাত কাটানোর সুবিধাও। তাড়াতাড়ি শেষ হল যাত্রার প্রয়োজনীয় নথি ও বাড়তি মাল বুকিংয়ের কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইকে বাসে ওঠার আহ্বান। সামনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল ঝকঝকে রঙিন দুটি বাস। দেখেই মন উড়াল দিতে চায় দূরদেশের পথে।

যাত্রা শুরু হল ভারতীয় সময় সকাল সাতটায়। কর্ণধার লিয়াজঁ অফিসার আমাদের স্বাগত জানালেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন। প্রাতরাশ ও পানি সরবরাহও হল। তার আন্তরিক ব্যবহার মনে রাখার মতো।

বাস চলল কলকাতা থেকে বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া, বনগাঁ, পেট্রাপোল/বেনাপোল, ঝিকরগাছা, যশোর, মাগুরা, দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, ঘিওর, মানিকগঞ্জ, সিঙ্গাইর, সাভার হয়ে ঢাকার দিকে। পথে পড়েছে মধুমতী, ধলেশ্বরী, মোহময়ী ও পদ্মা নদী। মোটর-লঞ্চে বাস পার হল পদ্মা নদী। প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথ পেরোলাম বারো ঘণ্টায়।

বাস চলল কবি নজরুল ইগলাম সরণি ধরে। সকালে ফাঁকা রাস্তা, দমদম এয়ারপোর্ট পাশ কাটিয়ে বাস এসে পৌঁছল যশোর রোডে। এটি কলকাতা-যশোরের একমাত্র নড়ির যোগ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনার সাক্ষী।

বাসের ভেতরে মৃদু রবীন্দ্রগীতি বাজছিল। লিয়াজঁ অফিসার বাংলা ম্যাগাজিন বিলোচ্ছেন, হেডফোনে যাত্রীরা চারটি চ্যানেলের মাধ্যমে গান শুনতে পারছে। বিনোদনের পূর্ণ বন্দোবস্ত।

বেলা ১০:১৫ মিনিটে যশোর রোডের ছায়ায় পৌঁছালাম পেট্রাপোলে। অশোকনগরের কাছে ছোট বিরতি নিলাম ‘খেয়া’ পান্থশালায়। ভারতীয় সীমানায় কাস্টম ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বাস ঢুকল বাংলাদেশ-বেনাপোলে। কাঁটার বেড়া জানান দিচ্ছে দুই দেশের সীমান্ত। এখানে ঘড়ি এগিয়ে নিলাম ৩০ মিনিট, বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী। ডলার বদলে বাংলাদেশি টাকা নিলাম। দুপুরের রোদ গরম, প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কচি ডাব খেয়ে পুনরায় চলার শুরু।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে সবুজ ধানখেত, জেলে জল ফেলা, আকাশে উড়ছে গাঙচিল। গ্রামের মেঠো পথে গরুর গাড়ি পসরা নিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে ইটভাটার ধোঁয়া ও কালো ধুলো। পথের দৃশ্য বদলাচ্ছে দ্রুত।

দুপুর তিনটার দিকে মাগুরা হাইওয়ে রেস্তোরাঁয় বিরতি, মাছ-ভাত দিয়ে খেয়ে উঠলাম। কিছু সময় পরিচিত হবার সুযোগ হল যাত্রীদের সঙ্গে – কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ আত্মীয়ের কাছে, কেউ ব্যবসা বা কেনাকাটার জন্য, কেউ বেড়াতে।

পুনরায় চলা শুরু। দুধারে সবুজের মধ্যে বাস পৌঁছল পদ্মার পারে দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে। লঞ্চে উঠা হল, বাসের সাথে আরও কয়েকটি ট্রাকও। ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে লঞ্চ পাটুরিয়ার ঘাটে। এরপর আবার বাসে উঠে ঢাকার পথে।

পদ্মা পাড়ি নিঃসন্দেহে যাত্রার বড় আকর্ষণ। সারা আকাশে লাল থালার মতো সূর্য ডুবে যাচ্ছে ঝাউ বনের ফাঁক দিয়ে। চোখ ফেরানো যায় না।

সন্ধ্যা নেমেছে। চওড়া রাস্তা ধরে বাস ছুটল ঢাকার দিকে। আধুনিক ঢাকা পরিচিত করাল ঝলমলে আলো, বিশাল ইমারত ও শপিং মল। রাত ৮:১০ মিনিটে পৌঁছলাম কমলাপুর আন্তর্জাতিক বাসআড্ডায়। বারো ঘণ্টার বেশি সময়ের মধ্যে ৩৫০ কিলোমিটার পথ পেরোলাম সুন্দর রাস্তা, আধুনিক বাস ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যাত্রায়।